নেক আমল সবসময় ফজিলতপূর্ণ হলেও পবিত্র রমজান মাসে প্রত্যেকটি নেক আমলের সওয়াব ও ফজিলত বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। আর রোজার মাসে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। নিচে সেরকম কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো—
চাঁদ দেখে কল্যাণের দোয়া পাঠ
নবী করিম (স.) চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাসের জন্য কল্যাণের দোয়া করেছেন। হজরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন এই দোয়া পড়তেন-
اللَّهُمَّ أهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأمْنِ وَالإيمانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإسْلاَمِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ।’ (সুনানে তিরমিজি: ১২২৮)
দোয়ার প্রতিটি শব্দ দ্বারা শান্তি ও নিরাপত্তার আবেদন করা হয়েছে। ‘আহিল্লাহু’ শব্দের অর্থ হচ্ছে উদিত করুন। অর্থাৎ এই চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সুরক্ষা ও ঈমান দিন। ‘বিল আমনি’ অর্থ বিভিন্ন ধরণের মসিবত থেকে আমাদের নিরাপদে রাখুন। ‘ওয়াল ঈমানি’ অর্থ ঈমানের ওপর সুদৃঢ় রাখুন। ‘ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি’ অর্থ দ্বীন ও দুনিয়ার সব ধরণের ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন। ‘রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ’ শব্দ দ্বারা নতুন চাঁদকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, আমি তোমাকে দেখে দোয়া পড়েছি কিন্তু তোমার স্রষ্টা ও আমার স্রষ্টা এক ও অভিন্ন।
তারাবির নামাজ আদায়
রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো- তারাবি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করে, তার অতীতের গুনাহসমূহ আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারি প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃ. হাদিস ৩৬, ই.ফা.)
তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। পারিবারিকভাবেও তারাবির নামাজের জামাত করা যেতে পারে। বিধি-নিষেধের কারণে যদি সম্ভব না হয়, তবে একাকী তো অবশ্যই পড়া যায়। কেননা একাধিক সাহাবি তারাবির নামাজ একাকী আদায় করেছেন বলেও প্রমাণিত।
তাহাজ্জুদ আদায়
তাহাজ্জুদ সারা বছরের আমল। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের তাহাজ্জুদ’ (মুসলিম: ১১৬৩)। রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় অত্যন্ত সহজ। সেহরির আগে বা পরে দুই-দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ আদায় করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, পবিত্র রমজানে নফলের সওয়াব ফরজের সমান, ফরজের সওয়াব সত্তর গুণ।
তাছাড়া, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) রমজান মাসে তাহাজ্জুদের প্রতি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তবে তিনি আবশ্য পালনীয় বিষয় হিসেবে নির্দেশ দেননি। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার পূর্ববর্তী পাপ মার্জনা করবেন।’ (সুনানে নাসায়ি: ২১৯৭)
সেহরির সুন্নত আদায়
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৫০)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন , ‘এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরি করো। কারণ যারা সেহরি খায়, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/১২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৯০১০; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৪৭৬)
সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সেহরি খাওয়া মোস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সকল নবীকে সময় হওয়ার পরপরই (তাড়াতাড়ি) ইফতার করতে এবং শেষ সময়ে সেহরি খেতে আদেশ করা হয়েছে।’ (আলমুজামুল আওসাত: ২/৫২৬; মাজমাউয যাওয়াইদ: ৩/৩৬৮)
আমর ইবনে মায়মুন আলআওদী বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন আর বিলম্বে সেহরি খেতেন।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৯০২৫)
তবে, ‘সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়—এত দেরি করা মাকরুহ’ (ফতোয়া আলমগিরি: খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ২০১)।
ইফতারের সুন্নত আদায়
অনতিবিলম্বে ইফতার করা মহানবী (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে’ (সহিহ বুখারি: ১৮২১; সহিহ মুসলিম: ১৮৩৮)। অন্য হাদিসে নবী করিম (স.) বলেছেন—
‘দ্বীন ততদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে, যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে’ (আবু দাউদ: ২৩৫৫)
এছাড়াও ইফতারের দোয়া পড়া এবং খেজুর, পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। আল্লাহর রাসুল (স.) খেজুর, পানি, দুধ দিয়ে ইফতার করেছেন। ইফতারে বেশি খাওয়া জরুরি নয়। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’(তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)
লক্ষ্য রাখতে হবে, রোজাদারকে ইফতার করানো বেশি ফজিলতপূর্ণ আমল। ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬; ইবনে হিব্বান: ৮/২১৬; সহিহ আল-জামে: ৬৪১৫)
জবানের হেফাজত, গিবত-মিথ্যাচার সবসময় বর্জনীয়
মিথ্যাচার ও গিবতের কারণে রোজা ভেঙে যায় না ঠিক, তবে রোজার সওয়াব ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন—
‘রোজা হলো (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ, কিভাবে রোজা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী করিম (স.) বললেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা গিবত করার দ্বারা।’ (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানি: ৭৮১০; নাসায়ি: ২২৩৫)
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেছেন—
আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; শুধু রোজা ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমি নিজে এর পুরস্কার দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। রোজা রেখে তোমাদের কেউ যেন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই (অনাহারের কারণে সৃষ্ট) রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিময়…। (বুখারি: ১৯০৪; মুসলিম: ২৭৬২)
সুতরাং জবানের হেফাজত করা পবিত্র রমজানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল।
অন্যের কষ্ট অনুধাবন ও দান-সদকা
মুমিন রোজা রাখার মাধ্যমে ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। তাই সে প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের খোঁজখবর রাখে। এটি রজমানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
রাসুলুল্লাহ স. রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত; যখন জিব্রাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (স.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারি: ০৬; মুসলিম: ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ: ২৬১৬)
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত সুন্নতের অনুসরণ করা।
কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন
পবিত্র রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। প্রতি রমজানে রাসুল (স.) ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। নবীজি (স.) জীবনের শেষ রমজানে উভয়ে উভয়কে দু-দুবার করে পূর্ণ কোরআন পাঠ করে শোনান। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
এ ক্ষেত্রে ‘য়ুদাররিসু’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের তাগিদ দেয়। তাই তরজমা ও তাফসিরের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।
তাওবা ও মাগফেরাত
তওবা-ইস্তেগফার সবসময়ের আমল হলেও রমজানে এর গুরুত্ব ও ফজিলত স্বাভাবিকভাবেই অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই রমজানে তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলে আকরাম (স.) বলেন, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারীর অবস্থা এমন, যেন তার কোনো গুনাহ নেই’। (ইবনে মাজা: ২/১৪১৯)
মিসওয়াক
মিসওয়াক করা একটি হারানো সুন্নত। মহানবী (স.) থেকে মিসওয়াক প্রসঙ্গে ৪০টি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, ‘যখনই হজরত জিবরাইল (আ.) আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতেন। এতে আমি আশঙ্কাবোধ করলাম যে, (মিসওয়াক করে) আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দেবো (আহমদ: ২২২৬৯, মিশকাত:৩৫৫)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন তখনই অজু করার আগে মিসওয়াক করতেন’ (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাত: ৩৫২)।
মহানবী (স.) আরও বলেছেন, ‘নবী-রাসুলদের সুন্নত হলো চারটি। ১. লজ্জা করা, অন্য বর্ণনায় খতনা করা; ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা; ৩. মিসওয়াক করা এবং ৪. বিয়ে করা’ (তিরমিজি, মিসকাত: ৩৫১)
তাই আমাদের উচিত, অবহেলিত এই সুন্নতটি রমজানে চালু করা।
ওমরা
পবিত্র রমজান মাসে ওমরা পালন করলে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (স.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের?’ ইবনে আব্বাস (রা.) নারীর নাম বলেছিলেন; কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। ওই নারী বলল, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি।’ নবী (স.) বলেন, ‘আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরা করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য।’ (বুখারি : ১৭৮২)
শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা অথবা আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া
রাসুল স. রমজানের রাতে ঘুমাতেন না। কিন্তু শেষ দশকে তিনি সবাইকে নিয়ে ইবাদত করতেন। সাহাবীরাও এই সময়কে খুব গুরুত্ব দিতেন। রমজানের অন্যান্য দিনে যেই আমলগুলো করতেন, শেষ দশকে এসে তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশকে নবীজি (সা.) ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন। অর্থাৎ ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
রমজানের শেষ দশক এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার মূল কারণ হল, লাইলাতুল কদর বা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাতের কারণে। কিন্তু হাদিস শরীফে কদরের রাত ঠিক কোনটি, তা নির্ধারণ করে বলা হয়নি। রমজানের শেষ দশকে তা খুঁজতে বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, নবীজি (স.) নির্দেশ দিয়েছেন—
`তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর খোঁজ করো।’ (বুখারি: ২০২০)
অন্য বর্ণনায় আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বে-জোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল-কদর তালাশ করো”। (বুখারী: ২০১৭)
একারণেই রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার বিধান দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কদরের রাত পাওয়াটা নিশ্চিত হয়। তাই সম্ভব হলে ইতেকাফ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ।
সদকাতুল ফিতর আদায়
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের মতো সদকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করে আসছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৯)
হজরত জারির (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা সদকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/৯৬)
গুনাহ পরিত্যাগ ও তাকওয়া অর্জন
আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো। ’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা। ’ (সুনানে তিবরানি: ৫৬৩৬)
সুতরাং মুসলমান মাত্রই গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিরত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা ও আমল করা জরুরি।
শ্রমিক ও অধীনস্তদের কাজ হালকা করা
রমজান মাস রহমতের ও ইবাদতের জন্য বিশেষায়িত। এ মাসে মালিক বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো শ্রমিকের প্রতি রহম করা, তাঁর কাজের চাপ কমিয়ে দিয়ে তাঁকে ইবাদতে সহায়তা করা। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন—
‘যে ব্যক্তি রমাদান মাসে তার কাজের লোকের কাজ কমিয়ে সহজ করে দিল, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার হিসাব সহজ করে দেবেন।’ (বুখারি)
পারিশ্রমিকের ব্যাপারে হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করো তার ঘাম শুকানোর আগেই’ (বায়হাকি, মেশকাত)। যারা শ্রমিকের মজুরি আদায়ে টালবাহানা করেন, তাদের ব্যাপারে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘সামর্থ্যবান পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম বা অবিচার’ (বুখারি)। ‘হাশরের দিনে জুলুম অন্ধকার রূপে আবির্ভূত হবে’ (মুসলিম)।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানের হক ও গুরুত্ব বিবেচনায় কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যথাযথ আমল করার তওফিক দান করুন আমিন।
Tweet
Share