প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-জাপানের গভীর বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং উচ্চ মাত্রায় বিকশিত হয়েছে। আগামী দিনে এই বন্ধুত্ব আরও বাড়বে।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাস যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ভিডিও বার্তা দেন বাংলাদেশ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তায় বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে আমি আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে আমি জাপানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি মহামহিম সম্রাট ইমেরিটাস আকিহিতোর সঙ্গে আমার সাক্ষাতের কথাও স্মরণ করি। ৮৮ বছর বয়সে জাপানের দীর্ঘতম জীবিত সম্রাট হওয়ার জন্য তাকে অভিনন্দন জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে জাপানের স্বীকৃতির পর থেকে আমাদের দুই দেশ চমৎকার সম্পর্ক উপভোগ করছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জাপান সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা করে। এই সফর একটি অবিচল এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আমার বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে জাপান সফর আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের । ‘আজ আমি আনন্দিত যে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমাদের এই বন্ধুত্ব গভীরতা এবং মাত্রায় এতটাই বিকশিত হয়েছে যে আমাদের ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ এখন নিকট ভবিষ্যতে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এ উন্নীত হওয়ার জন্য প্রস্তুত। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সমর্থনকে স্বীকার করছি। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আমি আনন্দিত। আমি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশকে আকর্ষণীয় বলে মনে করে। একই সঙ্গে জাপান এখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মাইলফলক বছরটি যথাযথভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। মহামারী মোকাবেলায় সহায়তার জন্য অবশ্যই জাপানের সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশ্ব শান্তি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বিশ্বস্ত অংশীদার এবং শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ই সবসময় একে অপরকে সমর্থন করে কাজ করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সঙ্কট সমাধানে উভয়েরই অভিন্ন মতামত রয়েছে। আমরা এই বাস্তুচ্যুত মানুষদের মিয়ানমারে তাদের নিজ বাড়িতে দ্রুত স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জাপানের সমর্থন চাই।
তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি আমি উন্নতির অনেক সুযোগও দেখছি। প্রকৃতপক্ষে এই সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে পারস্পরিক উদ্যোগ অপরিহার্য। আমাদের বিগত ৫০ বছরের সহযোগিতা আগামী ৫০ বছরের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বক্তব্য রাখেন।