নতুন নর্বাচনের জন্য পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী।
তিনি জানিয়েছেন, পিটিআইয়ের মূল কমিটির বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারপরই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলজার আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ‘আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের জন্য পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি গুলজার আহমেদের নাম প্রস্তাব করছি’।
এর আগে, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং বিরোধী নেতা শেহবাজ শরিফের কাছে চিঠি লিখে তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট আলভি।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি বাতিল এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর পাকিস্তানে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে; তা শেষ পর্যন্ত দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে গড়িয়েছে। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় পরিষদে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশে আগাম নির্বাচনের যে ডাক দিয়েছেন তার বৈধতা নিয়ে সোমবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। তবে আদালত আজই কোনো রায় না দিয়ে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করেছেন।
দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম মিত্র মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) জোট ছেড়ে যাওয়ায় সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান।
রবিবার তার বিরুদ্ধে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অধিবেশন শুরুর পর অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন সংসদের ডেপুটি স্পিকার।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, বর্তমান পার্লামেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান নতুন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মামলায় ইমরান খান জয়ী হলেও আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির বিরোধী দলগুলোও আগাম নির্বাচন চায়, যদিও সংসদীয় ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানের রাজনৈতিক পতন ঘটিয়েছে তারা।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ। সোমবার পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, জাতি আজ হতবাক। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং গণমাধ্যমও ইমরান খানের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নির্বাচিত হবেন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের তেমন নেই, বরং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার ঐক্যমতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন প্রেসিডেন্ট।
অনুচ্ছেদ ২২৪ অনুযায়ী, বাতিল হয়ে যাওয়া সংসদের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার মধ্যে একজনকে নিয়োগের বিষয়ে ঐক্যমত্য হতে হবে।
মন্ত্রিসভা রদ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে এই নিয়োগ দিতে হবে।
নতুন নাম নির্ধারিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট সেই নাম অনুমোদন করবেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে থাকবেন।
যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা – বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইমরান খান ও শাহবাজ শরিফ – একজন প্রার্থীর নামের বিষয়ে সম্মত হতে না পারেন, তাহলে এই দায়িত্ব একটি কমিটির ওপর বর্তাবে যেখানে ক্ষমতাসীন দলের চারজন ও বিরোধী দলের চারজন সদস্য থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কমিটি যদি তিনদিনের মধ্যে যে কোনো একজন প্রার্থীর নামের বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের ওপর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের দায়িত্ব অর্পিত হবে।
এরপর নির্বাচন কমিশনকে দুই দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে হবে।