অস্ট্রিয়া সরকার প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর দেশটিতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা প্রায় ৪,৫০০ অভিভাবকহীন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এসব শিশুদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অস্ট্রিয়ায় এসে ২০২১ সালে আশ্রয়ের আবেদন করেছিল ৫,৭৭০ টি অভিভাবকহীন শিশু এবং কিশোর-কিশোরী। তাদের সাথে পিতা-মাতা বা কোনো আইনি অভিভাবক ছিলেন না।
এসব শিশুদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান (৩,৪০১) এবং সিরিয়া (১,৩৪৫) থেকে আসলেও তাদের সাথে সোমালিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মরক্কো এবং মিশরের মতো দূর দূরান্তের দেশ থেকে আসা নাবালকরাও ছিল।
এ বিষয়ে অস্ট্রিয়ার উদারপন্থি নিওস পার্টির এমপি স্টেফানি ক্রিসপারের একটি সংসদীয় প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। যেখানে উঠে আসে, ২০২১ সালে দেশটিতে আসা নাবালকদের মধ্যে ৪,৪৮০ জনের সঙ্গে পরবর্তীতে কী হয়েছিল সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ, গত বছর অস্ট্রিয়ায় আসা অভিভাবকহীন অভিবাসী শিশুদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ নিখোঁজ।
নিখোঁজ
বহু বছর ধরে অভিভাবকহীন বিদেশি শিশুদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষার দাবিতে কাজ করে আসছেন এনজিও অ্যাসাইলাম কোঅর্ডিনেশনের কর্মকর্তা লিসা ওলফসেগার।
তিনি একটি বিবৃতিতে বলেন, “চিন্তা করুন এক বছরে বিভিন্ন স্কুলের প্রায় ১৮০ টি ক্লাসে থাকা শিশুরা কোনো ধরনের আলামত ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে গেছে। এসব শিশুরা কোথায় গেল?”
লিস ওলফসেগারের মতে, হতে পারে এত বিপুল সংখ্যক শিশু অন্যান্য ইইউ দেশগুলিতে থাকা তাদের আত্মীয়দের কাছে চলে গেছে।
ইউরোপে অনিয়মিত উপায়ে প্রবেশ করা শিশুরা একটি দেশে আশ্রয় আবেদন করার পর অন্য একটি দেশে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগদানের অর্থ হল প্রথম দেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিখোঁজ হওয়া। এসব নাবালকদের অবৈধ’ রুটে ইউরোপে প্রবেশ করার কারণ হচ্ছে ইউরোপে পারিবারিক ভিসা শুধুমাত্র পিতামাতা এবং ভাইবোনদের জন্য উন্মুক্ত। পরিবারের অন্য সদস্যরা বা দূরের আত্মীয়দের পারিবারিক ভিসায় নিয়ে আসার সুযোগ নেই।
ওলফসেগার আরও বলেন, নিখোঁজদের মধ্যে অনেকেই মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অভিবাসী শিশুদের একা ভ্রমণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসী শিশুকে অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়।
জাতিসংঘের পাচারবিরোধী সংস্থা ইউএনওডিসি-র সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে পাচারের শিকারের ব্যক্তিদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ কিশোর ও কিশোরী।
নেই কোন আইনি অভিভাবক
ওলফসেগারের মতে, “সমস্যার মূল হল কোনো ধরনের অভিভাবক ছাড়া আসা এসব নাবালকদের জন্য দ্রুত কোনো আইনি অভিভাবক নিয়োগ করা হয় না। আশ্রয় প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো একক ব্যক্তি তাদেরকে তথ্য দিতে দায়বদ্ধ থাকে না। ফলস্বরূপ শিশুরা প্রায়ই তাদের অধিকার এবং সুযোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার সুযোগ পায় না। কেউ কেউ তাদের পরিস্থিতি এত কঠিন বলে মনে করে যে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পথ বেছে নেয়। যা নাবালকদের পাচার বা শোষণের মতো কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুরা অস্ট্রিয়ায় আসার পর দ্রুত তাদের জন্য একজন আইনি অভিভাবক নিয়োগ করা হলে এই সমস্যাগুলি কমিয়ে আনা যাবে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।”
ইউক্রেন থেকে বিপুল সংখ্যক অভিভাবকহীন নাবালক অস্ট্রিয়ায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় অভিভাবকত্বের বিষয়টি অস্ট্রিয়া সরকারের মনোযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ মাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফানি ক্রিস্পার জানিয়েছেন ডান,মধ্যপন্থি এবং সবুজ দলগুলির একটি জোট সমস্যাটি সমাধান করার লক্ষ্যে জোরালোভাবে সংসদে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন এই প্রতিশ্রুতির পক্ষে কোন কার্যকর অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।