তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার ১৬ বছরের। দীর্ঘ এ সময়ে বাংলাদেশের হয়ে এ তারকা ব্যাটার খেলেছেন ওপেনিং পজিশনে। দলের দুঃসময়ে ব্যাট হাতে দলকে বিপদমুক্তও করেছেন বহুবার। অনেক ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন টাইগার এই ওপেনার।
ক্যারিয়ারে তামিম খেলেছেন ২৪১ ওয়ানডে ম্যাচ। রান করেছেন ৩৬.৬২ গড়ে ৮ হাজার ৩১৩। ওয়ানডে ফরম্যাটে তামিমের সেঞ্চুরি রয়েছে ১৪টি, যেখানে অর্ধ-শতক ৫৬টি। টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশ দলকে লম্বা সময় সার্ভিস দিয়েছেন তামিম। ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫ হজার ১৩৪ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি ৩১টি। এই সংস্করণে টাইগারদের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১ হাজার ৭০১ রান করেছেন তামিম। টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের পক্ষে একমাত্র শতক রয়েছে এই ব্যাটারের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দলগুলোর মধ্যে তামিমের সর্বোচ্চ রান (২ হাজার ৬০১) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২ হাজার ৪১৯ রান। এ ছাড় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার রান ১ হাজার ৮২৬, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৪৮, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৪৭, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১ হাজার ৬২৯, ভারতের বিপক্ষে ১ হাজার ০১৮ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৫০।
তামিম ২০০৭ সালে তার ওয়ানডে অভিষেক করেন এবং পরের বছর তার প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন। ডিসেম্বর ২০১০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১১ পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন। ২০২১ সালের মার্চে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০টি হাফ সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন তামিম। ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক রান করার জন্য তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসাবে বিবেচিত হন। ২০১২ সালের শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের জন্য ওয়ায়াম্বা ইউনাইটেড তাকে দলে নিয়েছিল। তিনি ২০১২ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের জন্য পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়াদ্বারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে দুরন্ত রাজশাহীকে নেতৃত্ব দেন তিনি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, ২০১৮-১৯ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ড্রাফটের পরে তাকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলে ডাকা হয়েছিল। ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে পরাজিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিরোপা জয় করে, তামিমের ১৪১ পয়েন্ট, বিপিএলে তার প্রথম সেঞ্চুরি এবং সেই টুর্নামেন্টে ৪৬৭ রান। ২০১৯ সালের নভেম্বরে, তিনি ২০১৯-২০ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
২০১২ অক্টোবরের এর শেষে, ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডস তাকে নিউজিল্যান্ড এইচআরভি কাপ, একটি টি ২০ প্রতিযোগিতার জন্য চুক্তিবদ্ধ করে। তিনি ২০১৩ সালে উদ্বোধনী ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের জন্য আন্তর্জাতিক অভিজাত খেলোয়াড় হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন। জুলাই ২০১৪ সালে লর্ডসে দ্বিশতবার্ষিকী ম্যাচে তিনি রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের হয়ে খেলেন।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপার লিগে পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলেছেন তামিম। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লীগ টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণের জন্য তাকে নানগারহারের স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল। ২০২০ সালে তিনি লাহোর কালান্দার্সের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০২০-২১ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেন তিনি।
২০২২ সালের ১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ করেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তামিম। এরপর থেকে শুধু টেস্ট আর ওয়ানডেই বাঁহাতি এই ওপেনারকে দেখা গেছে।