শো-ডাউন ও পাল্টা শো-ডাউনের রাজনীতিতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হতে পারছে না আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশে বড় জমায়েত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের ওপর ভরসা হারিয়েছে দলীয় নেতৃত্ব। তাই শান্তি সমাবেশের আয়োজক হিসেবে সামনে আসছে সহযোগী সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত কখনও আমরা কর্মসূচি পালন করব, কখনও অন্যরা করবে। আমরা কেন করছি না, অন্যরা কেন করছে— এ বিষয়ে আপনাকে জবাবদিহি কেন করব? তাছাড়া আপনারা সাংবাদিক। অনেক কিছুই জানেন। আমি দায়িত্বে থেকে সব বলতে পারি না। বলতে গেলে অনেক কথা শুনতে হয়।
অপরদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
আওয়ামী লীগের দুই সভাপতিমণ্ডলীর নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে জমজমাট নগর রাজনীতি এখন নেই। কিছুটা নেতৃত্বের দুর্বলতা, কলহ-কোন্দল ও দল ক্ষমতায় থাকায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ জৌলুস হারিয়েছে। শৃঙ্খলায়ও দেখা দিয়েছে ঘাটতি। সব মিলিয়ে দুর্বল হয়েছে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের রাজনীতি। এখন যেকোনও মূল্যে নগরের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা জানান, শান্তি সমাবেশ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের অন্যতম দুই সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সামনে আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগও। এর প্রধান লক্ষ্য শান্তি সমাবেশে বড় ধরনের উপস্থিতি ঘটানো।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, মাঠে বিএনপির কর্মসূচিতে যে হারে জমায়েত ঘটেছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি শাখার আয়োজনে গত কয়েকটি শান্তি সমাবেশে সে তুলনায় উপস্থিতি কম। এমনিতে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা রাজধানীর রাজনীতিতে সবসময়ই নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তবে এবার তাদের কার্যক্রমে কিছুটা হলেও দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলটির এবারের পরিকল্পনা হলো যেকোনও মূল্যে ঢাকা নিয়ন্ত্রণ ও সচল রাখা। এজন্য মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রত্যাশার সঙ্গে নগরের দুটি অংশ পেরে উঠতে পারছে না। দুটি ইউনিটের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে মহানগরের রাজনীতি দলকে শক্তি জোগায়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আরও বলেন, এখন সভা-সমাবেশে লোক কত হলো সেটা দেশি-বিদেশি অনেকের কাছে জনপ্রিয়তার মানদণ্ড। তাই আওয়ামী লীগও বড় জমায়েতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। গত সমাবেশগুলোতে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যম দাবি করেছে বিএনপির সমাবেশে লোক সমাগম বেশি ঘটেছে।
সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে আওয়ামী লীগও এখন চায় তাদের শান্তি সমাবেশে বেশি লোক জড়ো করতে। তাই ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে এবারের কর্মসূচির দায়িত্ব সহযোগী সংগঠনগুলোকে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যুবশক্তি, তারুণ্য এবং ছাত্রসমাজও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, এটা দেশে-বিদেশে জানান দিতে চায় দলটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনীতিতে সভা-সমাবেশে ও জন উপস্থিতি এক ধরনের দলীয় শক্তির প্রমাণ দেওয়ার সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। কারোরই মনে করার কারণ নেই সমাবেশে উপস্থিত সবাই নিজের দলের। নিজেদের ভোটার। রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে উৎসুক মানুষই ভিড় করে অনেক বেশি। অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষগুলো বাদাম কিনে খায় আর সমাবেশের বক্তব্য শুনে। তারা কিন্তু ওই দলের ভোটার নয়।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনগণের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে আমরা শান্তি সমাবেশ করছি। মানুষ মনে করে বিএনপির সমাবেশ মানে সংঘাত সৃষ্টির সম্ভাবনা। আমরা সেসব জন সাধারণকে নিশ্চিন্ত রাখতে কর্মসূচি ডেকেছি।