আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছেই। দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানে সংকট সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজপথ দখলে ব্যস্ত দুই দল। কয়েক মাস ধরে একই দিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে দুই দল। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তেজনা।
আজ শুক্রবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বড় ধরনের সমাবেশ হতে যাচ্ছে। একই দিন গণতন্ত্র মঞ্চসহ আরও কয়েকটি দল ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কাছাকাছি স্থান ও সময়ে এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আয়োজনের প্রভাব পড়েছে নগরের জনজীবনে। তৈরি হয়েছে এক ধরনের রাজনৈতিক উত্তেজনা। জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ, আতংক। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলো ফাঁকা দেখা গেছে। গণপরিবহন চলাচল কমেছে, যাত্রীর সংখ্যাও অন্যদিনের তুলনায় কম। আর জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ যানবাহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ শুক্রবার বিকেল ৩টায় যৌথভাবে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে। বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
একই দিন বেলা ২টায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে এই কর্মসূচি আয়োজনে দুই পক্ষকেই ২৩টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে ডিএমপি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শেষ পর্যায়ে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে পশ্চিম ও দক্ষিণমুখী করে তৈরি করা হচ্ছে শান্তি সমাবেশের মঞ্চ। মঞ্চটির দৈর্ঘ্য ৬৪ ফুট ও প্রস্থ ২৮ ফুট।
আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। এছাড়া শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এই সমাবেশে কোনো চেয়ার থাকবে না।
অপরদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ কাজ তখনও সেভাবে শুরু হয়নি। ট্রাকযোগে মঞ্চ প্রস্তুতের সরঞ্জাম আসছিল তখনও। একইসঙ্গে পুলিশ হাসপাতাল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মাইক লাগানোর প্রস্তুতি চলছিল।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিএনপির এই মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা ভীড় করতে শুরু করেন। নেতাকর্মীর চাপে নয়াপল্টন ভিআইপি সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে থাকে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ১০ মিনিটের মধ্যে তাদেরকে সড়ক ছাড়ার নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশ মেনে সড়ক ফাঁকা করে আশপাশের বিভিন্ন অলি-গলিতে অবস্থান নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মুহূর্তে তাদের পুরো মনোযোগ শুক্রবারের মহাসমাবেশের দিকে। সমাবেশে নেতাকর্মী-সমর্থকের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের নীতিনির্ধারকেরা নানামুখী চেষ্টা ও সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সারা দেশে দলের সব পর্যায়ের কমিটির সদস্যদের মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দূরের জেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মীদের আগেভাগেই ঢাকায় পৌঁছানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে শুক্রবার সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। বৃহস্পতিবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সংহতি মিলনায়তনে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে বিকেল ৩টায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।