গভীর রাতে তালা ভেঙে বাড়ির ভিতর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে উজানি কান্দি খেলার মাঠের পাশে মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে ফেলে দূর্বৃত্তরা। কুমিল্লার দেবিদ্বারে পূর্ব শত্রুতার জেরে একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। ২৮ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাত্রের কোনো এক সময় দূর্বৃত্তরা সাংবাদিক কবির হোসেন’র গ্রামের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার ১০ নং দক্ষিণ গুনাইঘর ইউনিয়নের উজানী কান্দির তার নিজ বাড়ির ভেতর থেকে তালা ভেঙে মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় এবং বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে খেলার মাঠের পাশে নিয়ে গিয়ে তা পুড়িয়ে ফেলে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়,উজানি কান্দি ফুটবল খেলার মাঠের পশ্চিম পাশের একটি সব্জি ক্ষেতে মোটরসাইকেলের পুড়ে যাওয়া কঙ্কালটি পড়ে আছে। দূর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে মোটরসাইকেলটির কোনো অংশই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখায় আশেপাশের কাঁঠাল, কলা গাছগুলো ও পুড়ে গেছে। গভীর রাত এবং নিরিবিলি জায়গা হওয়ার কারনে আশেপাশের কোনো লোকজন বিষয়টি টের পায়নি। ভোরবেলা সব্জি ক্ষেতে সব্জি তুলতে এসে কবির হোসেনের ভাই বিপ্লব হোসেন পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলটি দেখতে পেয়ে দৌড়ে বাড়ি গিয়ে কবির হোসেন সহ বাড়ির সকলকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তা অবগত করলে সকলে দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসে। এবিষয়ে সাংবাদিক কবির হোসেন কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আবেগ আপ্লূত হয়ে কান্না শুরু করে দেন এবং বলেন, আমার চলার একমাত্র বাহন এই Hero Splendor + মোটরসাইকেলটি। দূর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে মোটরসাইকেলটির পাশাপাশি আমার হৃদয়কেও পুড়িয়েছে। কে বা কাহারা এটা করতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক কবির হোসেন বলেন, আমি কাউকে শত্রু মনে করিনা না। কিন্তু আমার গ্রামে কিছু লোক আমাকে শত্রু ভাবে এবং লাগাতার আমার ক্ষতি করেই যাচ্ছে। জানা যায়,জনাব কবির হোসেন একজন পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট। দীর্ঘদিন একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে চাকুরী করে অসুস্থতার কারনে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে এলাকায় একটি ফার্মেসি চালায়। পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ১টি হাইস্কুল ও ২ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, উজানি কান্দি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সহ-সভাপতি, উজানি কান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকের সদস্য, ১ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি। তিনি “বঙ্গবন্ধু কমিশন আন্তর্জাতিক প্রচার সেলে”র নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির আজীবন সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু অনূর্ধ্ব- ১৪ ফুটবল টুর্নামেন্টের কুমিল্লা জেলার চীপ কো-অর্ডিনেটর। বর্তমানে তিনি “দৈনিক দেশ প্রতিদিন” পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার,”বাংলা ৫২ নিউজ” দেবিদ্বার উপজেলা প্রতিনিধি। সামাজিক অবক্ষয় রোধে সমাজের নানান অসংগতি, অন্যায়-অবিচার, মাদক-জুয়া,ইভটিজিং, সহ নানান অপকর্মের প্রতিবাদ করে থাকেন তিনি। এ নিয়ে গ্রামের কিছু লোক পূর্বে থেকেই তার পেছনে লেগে আছে এবং বিনাকারণে তার ও তার পরিবার-পরিজনদের নামে নানান কুৎসা ও মিথ্যা অপবাদ অপপ্রচার চালিয়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে আসছে। যে কারনে বর্তমানে তিনি গ্রামের সকল সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সার্বক্ষণিক বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু তারপরও গ্রামের কিছু দুষ্কৃতকারী তার ও তার পরিবারের পিছু ছাড়ছে না। তিনি বলেন, গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি উঠতি বয়সের ছেলেদেরকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলার ইন্দন দিচ্ছে। এই চক্রটি এতই শক্তিশালী যে, কোনক্রমেই তাদের এই অপকর্ম থামানো যাচ্ছে না। কবির হোসেন আরো বলেন, তার নিজের জায়গার মাটি কাটতে গেলে বাধা, নিজের জায়গায় গাছের চাড়া লাগাতে গেলে বাধা, নিজের পারিবারিক কবরস্থানে ওয়াল নির্মাণ করতে গেলে বাধা সহ তার ব্যক্তিগত সকল কাজে বাধা সৃষ্টি করে হয়রানি করে আসছে গ্রামের একটা প্রভাবশালী মহল। বিগত ৮ মাসে ৩ টি অভিযোগ ও ১ টি জিডি করার পর সেগুলোর কোনো সুষ্ঠ তদন্ত না হওয়ায় অপরাধীরা আরো বেশী সক্রিয় ও সংঘবদ্ধ হয়ে জনাব কবির হোসেন কে মানসিক,শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ন্যায় বিচার দাবী করেন সাংবাদিক কবির হোসেন ও তার পরিবার। এ বিষয়ে গ্রামের মুরুব্বি জনাব ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, কবির সব সময় গ্রামের কল্যাণমূলক কাজে অগ্রগামী। তাকে কখনো কারো ক্ষতি করতে দেখিনি। তার ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দেয়া ন্যাক্কারজনক! এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব সাইফুল ইসলাম বেপারী বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আজকে কবির ভাইয়ের এই পরিনতি। আজকে তার মোটরসাইকেল পুড়িয়েছে কখন যেনো তাকেই পুড়িয়ে ফেলে তাই দেখার বিষয়। ১০ নং দক্ষিণ গুনাইঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব হুমায়ুন কবির এবিষয়ে বলেন, এটা দুঃখজনক ঘটনা। সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের কঠোর বিচার করা হবে। ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার জনাব হিরণ সরকার বলেন, এই গ্রামটা পূর্ব থেকেই অপরাধ প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। এখানে একজন মানুষ আরেকজনের ভালো চায় না। দুই পক্ষ ঝগড়া হলে সমাধানের জন্য এখানে তৃতীয় পক্ষ খুঁজে পাওয়া যায় না। একজন আরেকজনের ক্ষতির চিন্তায় থাকে সবসময়। শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দেবিদ্বার থানার এসআই জনাব রেজওয়ানুল ইসলাম’র নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।