জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট। আর এই বৈশ্বিক সংকটের বিরুপ প্রভাবে বাংলাদেশ এখন একটি বিপর্যয় উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। জলবায়ু সংক্রান্ত কারণে উদ্বাস্তুর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক কথা হলো এই বিপর্যয়ে আমরা সীমাহীন ক্ষতির শিকার হলেও আমাদের অসাবধানতা, অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার কারণে এই পরিস্থিতি আরো বেশি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে, বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে। যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের বড় একটি কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ী সেক্টরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করছে এই ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ব জ্বালানীর ব্যবহার।
তবে আশার কথা হলো, প্রকৃতির এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে ধীরে ধীরে নানান শ্রেণী -পেশার মানুষেরা একত্রিত হচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণরা – যাদের ভবিষ্যৎ জলবায়ু সংক্রান্ত কারণে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে – নানান কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জলবায়ূ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিতায় আজ, ১৫-ই সেপ্টেম্বর, দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক’। বাংলাদেশের সর্বস্তরের তরুণ-তরুণীদের নিয়ে আয়োজিত এই ধর্মঘট আন্দোলনে LCOY Bangladesh 2023 এবং এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।
এক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় জনসমাগম তৈরি হয়েছিলো রাজধানী ঢাকায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। শুক্রবার সকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত তরুণ-তরূণীরা একত্রিত হন। LCOY Bangladesh 2023 এর আয়োজক দল ও সহযোগী সংগঠনগুলি এই ক্লাইমেট স্ট্রাইকের অন্যতম আহবায়ক হিসেবে তখন উপস্থিত ছিলেন। এবারের গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো ‘এন্ড ফসিল ফুয়েলস’ বা “জীবাশ্ব জ্বালানী ব্যবহার বন্ধ করো”।
এ সম.য়ে জলবায়ূ পরিবর্তনের উপর জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা তরুণ-তরূণীদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে LCOY Bangladesh 2023 এর কন্ট্যাক্ট পয়েন্ট ‘ইশান মুহাইমিন’ বলেন –
উন্নত দেশগুলোর নানান কর্মকান্ডের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতাসহ যেই পরিবেশ বিপর্যয়গুলো হচ্ছে, তার ফলাফল বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ক্ষতির বিপরীতে আমরা যথার্থ সুবিচার পাচ্ছি না। তাছাড়া, অপর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেই ক্ষতিপূরণের অব্যবস্থাপনা আমাদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একজন বাংলাদেশি তরুণ হিসেবে আমি বিশ্বনেতাদের নিকট ‘ক্লাইমেট জাস্টিসের দাবী জানাই, এবং আমাদের এই দাবি অনতিবিলম্বে পূরণ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, আসন্ন কপ-২৮ (COP28) সম্মেলনে জলবায়ু সংকট নিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের চিন্তা ভাবনা তুলে ধরতে বিভিন্ন সংগঠন এই আয়োজনটি করেছিলো। এ সময়ে তরুণ-তরুণীদের শ্লোগানে শ্লোগানে ‘জলবায়ু সংকটের প্রতি বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ, এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিশ্চিতকরণ, নবায়নযোগ্য এনার্জির ব্যবহার বৃদ্ধি, জলবায়ু অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার নীতিগুলি বাস্তবায়নের জন্য তরুণদের অংশহগ্রহণের সু্যোগ সহ নানা দাবী উঠে আসে।