দেশে বর্তমানে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন। রিজার্ভে ডলার রেখে বসে থেকে তো লাভ নেই। রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচ করা অব্যাহত থাকবে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে চাইলে রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচের কোনো বিকল্প নেই।
আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, তার বেশির ভাগই পূরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে সুদের হার বৃদ্ধি থেকে শুরু করে অন্যান্য শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংক পূরণ করেছে। কেবল রিজার্ভ এবং রাজস্ব সংশ্লিষ্ট শর্ত পূরণ হয়নি। তবে বাংলাদেশ ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পাবে।
আইএমএফের সংস্কারে বাংলাদেশের বড় অর্জন জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে থাকা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক পলিসিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের আগে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করলে এটি দ্রুত কমতে থাকবে। যারা পণ্য ধরে রেখেছে তারা ছেড়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
পলিসি রিফর্মের বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, যখন যে রিফর্ম বা সংশোধন প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক করবে। বিশেষ করে পলিসি এক্সচেঞ্জ রেট রিফর্মের থেকে বড় রিফর্ম আর নেই। নির্বাচনের জন্য আমরা বসে থাকিনি। যখন যে রিফর্মের প্রয়োজন হয়েছে, আমরা নিয়েছি। অর্থ পাচার রোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক একযোগে কাজ করছে। কাজেই অর্থ পাচার বন্ধে আইএমএফের শর্তের দরকার নেই। একটি দেশ হিসেবে আমরা নিজের জায়গা থেকেই এটি বন্ধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
আইএমএফ নতুন করে কোনো শর্ত দেয়নি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের দেয়া আগের শর্তগুলো পূরণে কাজ করছে। প্রধান ছয়টি শর্তের মধ্যে রিজার্ভ আর রাজস্ব বাদে সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। আপাতত রিজার্ভ বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে জোর দিতে বলেছে আইএমএফ। ইতোমধ্যেই শর্ত মেনে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট চালু করা হয়েছে। কিছু শর্ত পূরণ করা সময়সাপেক্ষ। তবে সেক্ষেত্রেও কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, ৩ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। তাদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মূলত আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত বাংলাদেশ কতটা পূরণ করতে পেরেছে এবং সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়।
আইএমএফের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে সংস্থাটির এ পর্যালোচনা মিশন বাংলাদেশে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবে। দ্বিতীয় কিস্তি ঋণ ছাড়ের আগে শর্ত পরিপালন হচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করতেই আইএমএফের এবারের সফর।
নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্ত ছিল, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ থাকতে হবে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ সেপ্টেম্বরে ছিল ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার।