বিএনপির তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ১৫৮ জনকে গ্রেপ্তার, পুলিশের ওপর হামলা, দুই বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে সপ্তাহের অন্যান্য কর্মদিবসের মতো যানজট চোখে পড়েনি। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোতায়েন থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি প্লাটুন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে দেয়া হচ্ছে বিজিবি’র টহল।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বোরাক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
কদমতলী থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এছাড়া বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় ঈদগাহ ও হাইকোর্টের সামনের সড়কে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসটি কদম ফোয়ারার সামনে পৌঁছালে যাত্রীদের নামিয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্তব্যরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জানান, হাইকোর্টের সামনে বাসে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে সেখানে যায় ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট। কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা।
এছাড়া দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চানখারপুল মোড়ে অবরোধকারীদের হামলায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম, পরিদর্শক (অপারেশন্স) জাকির হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভঙ্কর রায়।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় অনুমতি না থাকায় মিছিলে বাধা দেয়া হয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মিছিলে থাকা নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমরা আহত হই। পরে আহত তিন পুলিশ সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে সকালে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় একটি পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে মোটরসাইকেলে এসে পুলিশ বক্সে ককটেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকার বিজয়নগরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের দাবি, অবরোধের সমর্থনকারী বিএনপির নেতাকর্মীরা এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে বিজয় নগরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ করে তারা। এসময় তারা একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ গিয়ে প্রাইভেটকারটি ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা করে।
এর আগে সকাল থেকে পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষিপ্ত ঝটিকা মিছিল করে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এসময় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীদের পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানা গেছে।
এছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থায় পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। ওই এলাকায় সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে কাউকে মিছিল করতে দেখা যায়নি।