ভোটের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ততোই আস্ফালন বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজশাহী-৪(বাগমারা) আসনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালাম আজাদের। ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন তিনি। জনসম্মুখে যা তা বলে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। নৌকার মনোনয়ন পেতে না পেতেই নিজেকে এমপির চেয়ে ক্ষমতাধর মনে করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ তার পক্ষে যে সকল নেতৃবৃন্দ ভোটের কাজ করছেন না তাদেরকে অল্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। সেই সাথে তাদেরকে পৃথিবী থেকে নাই করে (সরিয়ে) দেয়ার হুমকী প্রদান করছেন। তিন বারের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপিসহ তার সমর্থকদের নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদের দেয়া একটি বক্তব্য রোববার বনবন্ধু জাহেদুর রহমান ইকবাল নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভাইরাল হয়।
সেই ভিডিওতে দেখা যায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এনামুল হকের মতো লোককে ভুলি দিয়ে নৌকা নিয়েছি তার মানে বুঝতে হবে। আমি ফেরশতা, যারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তারা পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবে একটা কথা বলে রাখলাম। সেই সাথে সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আজাহারুল হককে নিয়ে ঘৃণিত বক্তব্য প্রদান করেছেন। ওই ভিডিওতে তিনি অধ্যক্ষ আজাহারুল হককে আজাহার-মাজাহার বলে (অশ্লীল ভাষায়) গালিগালাজ করতে দেখা যায়।
সেই সাথে তিনি বলেন, আমি গ্রেট লিডার বাগমারা। এলাকায় থাকবে নাকো। নৌকার বাইরে কথা বললে আজাহারের চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ করলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আজাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তো, নাকি ?। আওয়ামী লীগ করতে হলে এলাকায় থাকতে হবে। নৌকার ভোট করতে হবে। ”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী কোন আচরণবিধি মানছেন না তিনি। এরই মধ্যে আবুল কালাম আজাদকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়েছিল। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের করায় আবুল কালাম আজাদ স্বশরীরে হাজির হয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা প্রদান করেন।
সেটাই যেন শেষ না। সেখানে থেকে এসে তিনি আবারো নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে চলেছেন। তার এমন কর্মকান্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই আবুল কালাম আজাদের মতো তার অনুসারীরাও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। আচরণবিধি ভঙ্গ করায় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার কেউ শোকজ করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে প্রতিটি প্রার্থীকে সমান অধিকার দিয়ে নির্বাচনের মাঠে রেখেছেন সেখানে এমন বক্তব্য কতটা স্বাধীন নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে, এমন প্রশ্নও তুলেছেন সাধারণ ভোটাররা। কোন প্রার্থীকেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে বলা হয়নি। যার জনপ্রিয়তা বেশি সেই জিতে আসুক বলেও ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। এক কথায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন। পেশীশক্তি আর দাম্ভীকতার বড়াই করে এবার লাভ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাই লক্ষ্য ইসির।
নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের এমন হুমকির ভিডিওর ব্যাপারে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হুমকি ধামকি দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক সৃৃষ্টি করতে পারবে না। বাগমারার মানুষ ১৫ বছর ধরে শান্তিতে আছে। তারা কোন সন্ত্রাসী আর ক্যাডারকে ভোট দিবে না। বাগমারাবাসী সন্ত্রাস চাই না. শান্তি চাই। আমার পাশাপাশি আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।