নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার সাভার মডেল থানা পুলিশের সাদা পোশাক ধারী এক উপ-পরিদর্শক (এস আই) ও এক কনস্টেবলের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন ইংরেজি দৈনিক দ্যা নিউ ন্যাশন পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি এস এম মনিরুল ইসলাম (৩২)।
বুধবার রাত ১১ টার দিকে সাভার সদর ইউনিয়নের চাঁপাইন তালতলা এলাকায় লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন ওই সাংবাদিক। এ সময় তাকে দেড় ঘন্টা আটকে রেখে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন করাসহ ইয়াবা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন অভিযুক্ত পুলিশের দুই সদস্য।
অভিযুক্তরা হলেন, সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আল মামুন কবির, কনস্টেবল নাজমুল সহ অজ্ঞাত আরো দুইজন। অন্য দুইজনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া না গেলেও তাদের মধ্যে একজন এস আই আল মামুন কবিরের সোর্স অন্যজন ব্যক্তিগত ড্রাইভার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা চারজন একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার ঢাকা মেট্রো-গ ১৩-৭০৭১ নাম্বার প্লেট ধারি গাড়িতে সাদা পোশাকে চাঁপাইনের বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করছিল।
এদিকে পুলিশের হাতে মারধরের শিকার আহত সাংবাদিক মনিরুল ইসলামকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সাভার সদর ইউনিয়নের চাঁপাইন তালতলা এলাকায় আমার বাসার সামনে একটি চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। এ সময় প্রতিবেশী এক নারী কান্না করতে করতে রাস্তায় হামাগুড়ি করছিলেন আর বলছিলেন আমার স্বামীকে কয়েকজন ব্যক্তি সাদা পোশাকে ধরে আটকে রেখেছে। এ ঘটনা শোনার পর স্থানীয় দুইজন সহ আমি সেখানে হাজির হই। আমাদের দেখামাত্রই কনস্টেবল নাজমুল আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন।
নাজমুল তেরে এসে আমাদের বলেন তোরা এখানে কি করস.? এই মুহূর্তে যা! সবাই যখন আমরা চলে আসছিলাম নাজমুল আরো বেপরোয়া হয়ে আমাদের দ্রুত যা নাইলে গারামু বলতে থাকেন! আমি আমার পরিচয় দিয়ে এর প্রতিবাদ করলে নাজমুল আমার কলার ধরে বলেন, তোরা সাংবাদিকরা তো চোর! আজকে তোরে আমি খাইছি বলেই এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি চড় থাপ্পড় মারা শুরু করেন। এ সময় আল মামুন কবির এগিয়ে এসে আমার কোমরের বেল্ট ধরে আমাকে বলেন তুই ইয়াবার ব্যবসা করস, তুই ইয়াবা খাস, তোর মুখে ইয়াবার গন্ধ পাচ্ছি। এরপর আমাকে দেড় ঘন্টা আটকে রেখে মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমাকে সার্চ করে আইডি কার্ড আনতে বলেন। আমি ভিজিটিং কার্ড বের করে দিলেও তারা আমার কথা শোনেনি। পরে আইডি কার্ড এনে তাকে দিয়েছি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সাংবাদিক মনিরের সাথে আজ পুলিশ যেটা করলো তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়.? তারা চারজন নাকি পুলিশ, তবে তারা সিভিলে এসেছে, তাদের পরিচয় গোপন করে বলছিলেন তারা এনজিও কর্মী। আমাদের প্রতিবেশী শ্রমিক সজলকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে টাকা আনতে বলেন এসআই আল মামুন কবির সহ তার সহযোগীরা। সজলরা গরীব মানুষ এবং নিরপরাধ আমরা সবাই জানি এবং সেটাই সাংবাদিক মনিরুল ইসলামকে জানাই। পরে তিনি কি কারণে সজলকে আটকে রাখা হয়েছে জানতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার আগেই গলির মধ্যে পাহারারত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুলসহ অন্য আরো দুইজন তারা এলোপাথারি ভাবে মনিরুল ইসলামকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন আর বলেন তোর সাংবাদিকতা কত দিনের দেখিয়ে দিচ্ছি। ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে তাকে এক পর্যায়ে থানায় নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এ সময় আশপাশ থেকে স্থানীয়রা এবং ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া এক সাংবাদিক এসে তাকে উদ্ধার করে। এর আগে এভাবে দেড় ঘন্টা তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায় পুলিশ সদস্যরা।
পরে অবশ্য ওই সাংবাদিকের সামনে তাদের ভুল স্বীকার করে সাংবাদিক মনিরুল ইসলামের কাছে এসআই আল মামুন কবির ও কনস্টেবল নাজমুল ক্ষমা চান।
সাদা পুলিশের হাতে আটক হওয়া শ্রমিক সজল জানান, আমি গরীব মানুষ, কর্ম করে খাই। চারজন ব্যক্তি আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে আধা ঘন্টা আটকে রেখে পুরো বাড়ি সার্চ করে। আমার সাথে প্রতিবেশী অন্য ভাড়াটিয়ারা আমাকে আটকের কারণ জিজ্ঞেস করতে চাইলে তাদের লাথি মারতে মারতে বের করে দেন। পরে জানতে পারি তারা সাভার মডেল থানা থেকে এসেছে। আমি এসময় হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। আমি বুঝতেও পারিনি যে কেন তাড়া আমাকে ধরতে এসেছে।
জেনেছি, একজন তাদের আচরণ ও কর্মকান্ড ভিডিও ধারণ করে রেখেছে। এগুলো দেখলে মানুষ বুঝতে পারবে তারা কি করেছে।
ভুক্তভোগী মনির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে বললেই হতো তারা পুলিশ তা না করে আমাকে গালমন্দ করে লাঞ্ছিত করেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হলাম।’ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করছি।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, এসআই আল মামুন কবিরের বিরুদ্ধে সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ নতুন নয়। সাভার থানায় চাকরির আগে আশুলিয়া থানায় চাকুরী করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার মতো একাধিক অপকর্মের ঘটনা রয়েছে। এ সময় অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থে কোটি টাকার উপর দামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে আশুলিয়ার ডিওএইচএস এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন আল মামুন কবির। তার অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাকি তার পকেটে থাকে এমন গল্পও মানুষকে শোনান বিতর্কিত এস আই আল মামুন কবির।
সাংবাদিককে মারধরের কথা শুনেছেন উল্লেখ করে ঢাকা জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাংবাদিককে পুলিশের দ্বারা মারধরের ঘটনা দুঃখজনক, এটা শৃঙ্খলা পরিপন্থী, কোন অফিসার সাংবাদিক তো দূরের কথা একজন সম্মানিত নাগরিককে এভাবে মারধর করতে পারে না। ‘সাভার থানার ওসিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের কোন ত্রুটি থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।