প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইন্টারন্যাশনাল ডাইমেনশন আছে। সেটাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে দেখাতে হবে নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সহিংসতাকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা উচিত না, এটা জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। সেটা অসুবিধা নেই; তারা জনমত সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু সহিংস পন্থায় যদি এটার বিরুদ্ধাচরণ করা হয় বা যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তাদের যদি বাধা দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে। সেই সংকট মোকাবিলা আমাদের করতে হবে। এই কারণে করতে হবে, নির্বাচন আমাদের নির্ধারিত সময়ে করতে হয়। এখানে প্রতিহত করার চেষ্টা আসতে পারে। বিপত্তি আসতে পারে, তারপরও এই দায়িত্বটা আমাদের পালন করতে হবে।
সোমবার (১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি সুন্দর রাখতে হবে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যখনই নির্বাচনের প্রশ্নটা আসে অনেকেই এটাকে হালকা করে নেয়। এটা হালকা করে নেওয়ার বিষয় না। আমাদের কাজ কিন্তু সরকার গঠন করা নয়। আমাদের কাজটা খুব সীমিত, নির্বাচন আয়োজন করে দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা। নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার নির্বাচিত না হয় তাহলে অগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার অবকাশ থাকে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, অনেকেই বলেন ওনারা (কমিশন) নির্বাচনটা তিনমাস পিছিয়ে দিলে ভালো হতো। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। নির্বাচন তিনমাস পিছিয়ে দেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। অনেকে মনে করেন নির্বাচন কমিশন আসল ক্ষমতার অধিকারী। প্রয়োজনে তিনমাস তিন বছর বা ত্রিশ বছর পিছিয়ে দিতে পারে। এগুলো সত্য নয়। যারা রাজনীতিবিদ তারা অবশ্য অবহিত আছেন একটা নির্ধারিত সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পারে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, একই দিনে ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ দায়িত্বটা কমিশনকে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কখনোই তার একক শক্তিতে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। এ কারণেই সংবিধানে আরপিওয়ে সুষ্পষ্ট করে বলা আছে, নির্বাচন পরিচালনায় কমিশন যেভাবে চাইবে রাষ্ট্র বা সরকার তা দিতে বাধ্য।
তিনি বলেন, এরপরও এটা ঐতিহাসিক সত্য বাংলাদেশের নির্বাচনটা আজ অবধি একটি স্থিতিশীল অবস্থানে এসে থিতু হতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন দেখেছি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে না বা হয় মোটামুটি যদি গ্রহণযোগ্য হয় সেটা নির্বাচন। কারণ নিরুঙ্কুশ অর্থে সামান্যতম অনিয়ম যে হবে না এটা কখনোই বলা যাবে না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন সার্বজনীন হয়ে ওঠেনি, ১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। পাবলিক পারসেপশনটা ইতিবাচক হয়নি। নির্বাচন শুধু সুষ্ঠু হলে হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, অবাধ হয়েছে— ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে। এই বিশ্বাসযোগ্যতা যদি না থাকে তাহলে পাবলিক পারসেপশন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি রং পারসেপশন গড়ে ওঠে সেটাই সত্য পারসেপশন।
তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতদূর সম্ভব নির্বাচনটাকে দৃশ্যমানভাবে স্বচ্ছ করে তুলতে হবে। দৃশ্যমানতার মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.), নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।