আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে খেজুরসহ আবশ্যকীয় আট পণ্য আমদানির পর মূল্য পরিশোধের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাহিদার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি মাথায় রেখে বাজারে প্রয়োজনীয় এসব পণ্য সবরাহ বাড়াতে ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, তেলসহ আট পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজানে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমদানি সহজ করতে এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং তা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপন এবং নগদ মার্জিন সংরক্ষণ প্রসঙ্গে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগে সার্কুলারের মাধ্যমে বিগত বছরের রমজান মাসে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিতব্য নগদ মার্জিনের হার নির্ধারণ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগামী পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এ জাতীয় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এসব পণ্যের আমদানি সহজীকরণের মাধ্যমে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুরের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিতব্য নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের বাজারে উল্লিখিত পণ্যগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতেও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আমদানি লেনদেন সহজতর করার লক্ষ্যে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর—এই ৮ পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। এই সুযোগ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে সম্প্রতি এফবিবিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে আমদানিতে বাণিজ্যিক ঋণপত্র বা এলসি খুলতে অগ্রাধিকার চান তারা। গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে শুধু আট পণ্যই নয়, এর বাইরেও অনেক আমদানি পণ্য রয়েছে। রমজানের পর ঈদ আসবে। এসব দিক বিবেচনায় এলসি খোলায় যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেন তারা। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে ওই বছর প্রতি মাসে এলসি নিষ্পত্তি যেখানে ৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল, তা গত নভেম্বরে ৪ বিলিয়নের ঘরে নেমেছে। আর নতুন এলসি খোলার হার ৭ বিলিয়ন থেকে নেমেছে ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, আগামী জানুয়ারি নাগাদ এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসবে।
ডলার সংকটের কারণে মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি); ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স; স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার; মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা; তৈরি পোশাক; চামড়াজাত পণ্য; পাটজাত পণ্য; প্রসাধনী; আসবাব ও সাজসজ্জা সামগ্রী; ফল ও ফুল; নন-সিরিয়াল ফুড যেমন—অশস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়; টিনজাত খাদ্য চকোলেট, বিস্কুট, জুস, সফট ড্রিঙ্কস ইত্যাদি; অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়; তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এমন নির্দেশনা আগেই দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আগে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। এমনকি এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মার্জিন গ্রাহকের নিজস্ব উৎস থেকে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক কোনো ধরনের অর্থায়ন করতে পারবে না, এমন নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া রয়েছে।
গত বছরও রমজান উপলক্ষে এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে আবশ্যকীয় এসব খাদ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিতে এলসি স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ব্যাংক-গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।