৭ জানুয়ারি ভোটের পর থেকেই আলোচনা ছিল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসবেন। এর জন্য তাদের জোট গঠন করা জরুরী ছিল। তবে এখন পর্যন্ত তারা তেমন কোনো কার্যক্রম করেননি। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামীকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) গণভবনে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, এবার ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন। স্বতন্ত্র এমপিদের মধ্যে ৫৮ জনই সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তারা সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা। তাদের মধ্যে দলের অনেক ত্যাগী নেতাও রয়েছেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সংসদে তাদের ভূমিকা কী হবে, এ নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন স্বতন্ত্র এমপিরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকেই আগামী পাঁচ বছর সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভূমিকা কী হবে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। এতে মাত্র ১১টি আসন নিয়ে বিরোধী দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি- এটা অনেকটা নিশ্চিত। তাহলে কী করবেন স্বতন্ত্র ৬২ এমপি। সংসদে এখন কী ভূমিকা নেবেন তারা? এসব নির্ধারিত হবে রোববার (২৮ জানুয়ারি)।
এদিকে স্বতন্ত্র এমপিরা কোনো রাজনৈতিক দলে যাবেন- আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এমনকী তারা নিজেরা কোনো জোট করতে চান কিনা সেটাও জানাতে হবে এই সময়ের মধ্যে।
দ্বাদশ সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী সংসদ সদস্যরা জানান, তারা আওয়ামী লীগের অংশ হয়েই থাকতে চান। তবে যাই হোক না কেনো- চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সরকার প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোববারের (২৮ জানুয়ারি) এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বলছেন সকলেই। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে থাকতে চাইলেও সংসদে জনগনের পক্ষে কথা বলতে পিছ পা হবেন না বলেও জানিয়েছেন কোনো কোনো এমপি।
অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিলের জন্য জাতীয় সংসদের চিঠির অপেক্ষায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু স্বতন্ত্রদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় চিঠির জবাব দিতে পারেনি সংসদ সচিবালয়।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৭ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩ আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। এর বাইরে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ গ্রহণের পরপরই আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা তাদের সংসদীয় দলের সভা করে। ওই সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচন করা হয়। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের অবস্থান কী হবে- ওই বৈঠকে সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্বতন্ত্রদের সঙ্গে শেখ হাসিনা আলাদা করে বসবেন বলে ওই বৈঠকে অবহিত করা হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আগামী রোববার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। এর বাইরে তিনি অন্য কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে বিজয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ডেকেছেন। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেটাই অনুসরণ করব। সংরক্ষিত আসনের বিষয়েও তিনি নির্দেশনা দিতে পারেন বলে মনে করছি।’
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তাদের সরকারের বাইরেই বসতে হবে। আওয়ামী লীগের যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী এখনো দলীয় স্ব স্ব পদে বহাল আছেন, সংসদ অধিবেশনে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে গণ্য করা হবে। এ বিষয়টিই আগামী রোববারের (২৮ জানুয়ারি) বৈঠকে সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্পষ্ট করে দিতে পারেন বলে জানা গেছে।