ইয়াছির আরাফাত
জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
জামালপুরে বকশীগঞ্জে কৃষি প্রনোদনার আওতায় যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে ১ শ ৫০ বিঘা জমিতে সমলয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এ চাষাবাদে কম খরচে কৃষক অধিক ধান উৎপাদন করতে পারবেন।ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বুধবার ৭ই ফেব্রুয়ারি বিকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলার চরকাউরিয়া মাঝপাড়া গ্রামে সমালয়ে চাষাবাদের শুভ উদ্বোধন করেন জামালপুর জেলার জেলা প্রশাসক শফিউর রহমান । উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাতের
সভাপতিত্বে , উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলার অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইমরুল কায়েস।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা । এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউর রাব্বি, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুরুল আমিন ফুরকান,বীর মুক্তিযোদ্ধা দুদু মিয়া, কৃষক মোশারফ সহ অনেকে। কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান , সমলয়ে চাষাবাদে আমরা পৌর এলাকার মাঝপাড়া গ্রামের ৫০ কৃষককে সম্পৃক্ত করেছি। তাদের জমিতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ২ কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজে কৃষকের খরচ বেঁচেছে। এ চাষাবাদে রাইসট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ৯শ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৩ হাজার টাকা খরচ হত। এছাড়া উইডার মেশিন দিয়ে নিড়ানী দেওয়া হবে। এতে মাত্র ২ জন শ্রমিক প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ৫ জন শ্রমিকের মজুরী সাশ্রয় হবে। এ ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেওয়া হবে। এ মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ১হাজার ৫শ টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘা প্রতি অন্তত ১০ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া এ পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘা প্রতি হাইাব্রিডে ২০ মণের স্থলে ২৫/৩০ মণ ধান উৎপাদিত হবে। এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সের ধানের চারা রোপণ করতে হয়। তাই ধানের উৎপাদন বেড়ে যায়।ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে ওই কৃষি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
মাঝপাড়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলী বলেন, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরিতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান আবাদ করেছি। এতে মাত্র ৯ শ টাকা খরচ হয়েছে। এ চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন ধানের ফলনও ভালো হবে। ভালো ফলন পেলে অধিক লাভবান হবো বলে আশা করছি। একই গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে সবই যন্ত্রের ব্যবহার। এখানে শ্রমিক তেমন লাগে না। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন শ্রমিককের ৩ হাজার টাকা মজুরী দিতে হয়।ধান নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকেনা। এ চাষাবাদে অধিক ফলন পেয়ে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারব। এতে আমাদের অধিক লাভ হবে। সরকার কৃষিকে যান্ত্রীকী করণ করতে চাইছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে শ্রমিক কম লাগে। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। সমলয়ে চাষবাদ কার্যক্রমের আওতায় ১শ ৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে একই জাতের ফসল আবাদ করতে হয়। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।