ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে এবার মুরগির দাম। নগরীতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা বেশি দরে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। কেন কারণ ছাড়াই ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। অথচ মুরগির বাচ্চা সরবরাহ ও খাবারসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিকই রয়েছে। এদিকে বেড়েছে চাল আলুসহ ভোগ্যপণ্যের দামও। তবে কিছুটা কমতির দিকে পেঁয়াজ ও সবজির দাম।
ভোক্তারা জানান, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মুরগির দাম বাড়িয়েছেন। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকার বেশি দামে।
প্রশাসনের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। ১৫ মার্চ মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। শুক্রবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ পণ্যই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, কর্ণফুলী মার্কেটের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। বাজারে তিন ধরনের সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে সোনালি মুরগি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হওয়ার কথা ৬৬৪ টাকায়।
চকবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী শফিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, বাড়তি চাহিদার সুযোগে খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকার নির্ধারিত দামে তো আমরা কিনে আনতেই পারছি না। ব্রয়লার মুরগি এখন ২৪০ টাকার নিচে বিক্রির সুযোগ নেই। অরিজিনাল সোনালি মুরগি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মুরগির দাম আর বাড়ার আশঙ্কা নেই। ঈদ উপলক্ষ্যে এখন খামারি পর্যায়েই মুরগির দাম বাড়তি, যার কারণে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও।
কয়েকদিনে বস্তা প্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ টাকার মতো। বাজারে মোটা চালের কেজি গত এক সপ্তাহে ২ টাকা বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে। আর সরু চাল তিন টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজার ঘুরে এ ধরনের চাল আরও বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সূত্র জানায়, ১৫ দিন আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা) কেজি ৫১-৫২ টাকা ছিল তা এখন ৫৩-৫৪ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর-২৮) কেজি ৫৬-৫৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা। কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মাঝারি মানের চালের। কেজিপ্রতি মাঝারি মানের চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬৪-৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬৬-৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
আগের বাড়তি দরেই খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে মানভেদে ১০ টাকা কমে কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দেশি রসুনের কেজি ১২০-১৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৯০-২০০ টাকা এবং আদা ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ডাল, সয়াবিন তেলের দামে কোনো হেরফের নেই।
বাজারদর : বাজারে সবজির দর কিছুটা কমেছে। বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি কমেছে। তবে মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বেশিরভাগ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বেগুন কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, ঢেঁড়স কেজি ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, হাইব্রিড শসা ২৫-৩০ টাকা, দেশি শসা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির শেষদিকে শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে বাজারে আসা সজনের দাম এখনো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তেলাপিয়া ও কই ৩০০ টাকা, শিং ৮০০-১০০০ টাকা কেজি, রুইয়ের কেজি ৪০০ টাকা, কাতল বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪২০ টাকায়। চিংড়ি ৬০০-৯০০ টাকা কেজি, শোল ৫০০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।