নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ৮ এপ্রিল (বুধবার) বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০২৪-২৬ কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে জালভোটের অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্বাচনে অ্যাফিলিয়েট কাটাগরির পরিচালক পদপ্রার্থী ও যাচাই ডট কম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ। তিনি অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরির প্রকৃত বিজয়ীকে বিজয়ী ঘোষণা করা এবং ঘোষিত নির্বাচনের সকল ফলাফল প্রত্যাখান এবং ফলাফল চ্যালেঞ্জের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসিসের এক্সেকিউটিভ কাউন্সিল হ্যান্ডওভার সেরেমনি স্থগিত রাখতে নির্বাচন আপীল বোর্ড বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
আজ ১১ এপ্রিল (শনিবার) বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর ২০২৪-২৬ কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর এ অভিযোগ জানানো হয়।
ওই অভিযোগে জানানো হয়েছে, গত বুধবার (৮ মে) দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) (২০২৪-২০২৬) কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং উক্ত দিনের সন্ধ্যায় বেসিস নির্বাচন কমিশন বোর্ডের চেয়ারম্যান টি আই এম নুরুল কবীর ভোটের ফলাফল প্রকাশ করেন। নির্বাচনে অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরি থেকে আমি-সহ আরও ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আন্তরিকভাবে সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু নির্বাচনে অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরির একজন প্রার্থী তার পক্ষে ভোট নিশ্চিত করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভোট প্রদান করিয়েছেন (প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে)।
জানা যায়, বেসিস এর এ নির্বাচনে অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরিতে মোট ভোটার ছিল ১৩৪ জন, এর মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ১১৮ জন, মোট ভোট প্রদানের হার ৮৮%। মোট ভোট থেকে ১ টি ভোট বাতিল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ওই দিনের ঘোষিত ফলাফলে বিপ্লব ঘোষ রাহুলের প্রাপ্ত ভোট ৪৮, আব্দুল আজিজের প্রাপ্ত ভোট ৪৬ এবং লুৎফি হায়দার চৌধুরী ভোট পেয়েছেন ২৩ টি।
আব্দুল আজিজ বলেন, ভোটারের ভোটার কার্ড সংগ্রহ করার সময় এবং ভোটের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করার জন্য ভোটার লিস্টের তালিকায় ভোটারের প্রতিষ্ঠানের নাম, ভোটারের নাম, আইডি নম্বর, ভোটারের ছবি, এবং ভোটার তালিকায় লুকিয়ে রাখা ভোটারের সিগনেচারের পাশে আরেকটি কাউন্টার সিগনেচার করার দরকার হয় এবং ভোটের ব্যালট সংগ্রহ করার সময় ভোটারের সিগনেচার দরকার হয় এবং উক্ত ভোটারের ছবির সাথে উপস্থিত ভোটারের ছবি এবং সিগনেচারের সাথে ভোটারের কাউন্টার সিগনেচার মিলতে হয় । যদি উপস্থিত ভোটারের ছবি এবং কাউন্টার সিগনেচার না মিলে এবং ভোটার তালিকার ছবির সাথে উপস্থিত ভোটারের ছবি না মিলে তাহলে উক্ত ভোট প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আমার সাথে প্রতিদ্বন্ধী এবং নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী এইভাবে তথ্যের গড়মিল থাকার পরও অবৈধভাবে ভোট প্রদানে সহযোগিতা করেন এবং অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে সফল হয়েছেন! বিজয়ী প্রার্থীর সহযোগিতা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটার লিস্টের সকল ভোটারের সিগনেচার শিটের সাথে উপস্থিত ভোটারের ছবি এবং সিগনেচার মিল না থাকার পরও ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এইভাবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচিত প্রার্থী যেহেতু অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাই সেই অবৈধ প্রাপ্ত ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার সাথে ভোটের পার্থক্যে যেহেতু মাত্র ২ (দুই) ভোটের। তাই আমার নিশ্চিত বিজয়ী হওয়াটা প্রতারণার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, একটি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেই ভোট আমার পক্ষে ছিল! অবৈধ ভোটের মাধ্যমে এবং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় গোপনে আমার আরেকটি প্রাপ্ত ভোট বাতিল করার মাধ্যমে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী নির্বাচিত প্রার্থী যখন প্রতারণার মাধ্যমে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাই এই ঘোষিত ফলাফল নিয়ে আমার জোর আপত্তি রয়েছে।
যাচাই ডট কম লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরির নির্বাচন কেন্দ্রের সকল ভোটার তালিকার ভোটার লিস্টের সিগনেচার শিট এবং ব্যালটের সিগনেচার শিট এবং সকল ভোটারের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যাচাই বাছাই করলে আমার অভিযোগের বিষয়টি শতভাগ সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়ে যাবে। ভোটার লিস্টের সিগনেচার শিটে এবং ব্যালটের সিগনেচার শিটের সিগনেচার এবং ছবি যাচাই বাছাই করে (প্রমাণ সংরক্ষণ রয়েছে) প্রকৃত ভোটারদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাব অনুযায়ী পুনরায় আমাকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ফলাফল ঘোষণা করতে আমি জোর দাবী জানাচ্ছি । আমি এই বিষয়ে প্রমানপত্র সহ সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছি।
নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, একাধিক ভোটার দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, কিন্তু দেশের বাইরে থাকা ভোটারের ভোটও কাস্ট হয়েছে মর্মে তথ্য পেয়েছি।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক ভোটের ফলাফলের ক্ষেত্রেও কারচুপি করা হয়েছে জানিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ফলাফলে দুইজন প্রার্থী আবু মোহাম্মদ রাশেদ মজিদ নোমান এবং সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল সমান সংখ্যক তিন ভোট পেয়ে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন এবং আরেকজন প্রার্থী দুই ভোট পেয়েছেন। পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজয়ী দুইজন প্রার্থীর থেকে একজনকে বেছে নেওয়ার জন্য লটারি করার উদ্দেশ্যে সচ্ছ গ্লাস ব্যবহার করা হয় নাই! একটি খামের মধ্যে ভাঁজ করা দুইটি কাগজে দুইজনের নামের পরিবর্তে দুইটি কাগজে একজন প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এর নাম লিখে একটি নাম উঠানো হয়েছে। আর্থাৎ লটারির জন্য আবু মোহাম্মদ রাশেদ মজিদ নোমান এর নাম লিখে ড্র করা হয় নাই এবং ড্র শেষে অপর নামটি উপস্থিত কাউকে দেখানো হয় নাই। এইভাবে জেনারেল ক্যাটাগরিতেও ফলাফল পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এই অসচ্ছ এবং অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল এবং জেনারেল ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
আব্দুল আজিজ জানান, প্রকৃত সত্য আড়াল করার জন্য নির্বাচন তফসিল অনুযায়ী ঘোষিত আপিলের নির্ধারিত সময় আজকে ১১/০৫/২০১৪ তারিখ পর্যন্ত রয়েছে । কিন্তু আপিলের নির্ধারণ অতিবাহিত হবার পূর্বেই আপিল নিষ্পত্তি না করে দ্রুততম সময়ে এক্সেকিউটিভ কাউন্সিল হ্যান্ডওভার সেরেমনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি এ পরিস্থিতিতে সকল ক্যাটাগরির সকল ভোটার তালিকার সকল তথ্য ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পুনরায় গননা করে এবং সকল তথ্য যাচাই বাছাই করে ফলাফল পুনরায় ঘোষণা করার দাবি জানান। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের আপিলের বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এক্সেকিউটিভ কাউন্সিল হ্যান্ডওভার সেরেমনি অনুষ্ঠান স্হগিত রাখতে অনুরোধ করেছেন।