ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় নানা লোভনীয় অফার দিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ‘ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ নামে নিবন্ধনহীন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই দিনমজুর, রিকশাচালক ও প্রবাসী।
চর চান্দিয়া গ্রামের আয়েশা আক্তার, আসমা আক্তার, সুমি আক্তার, মো. শাকিল, নুর আলমসহ ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজন জানান, প্রতারকেরা তাদের কাছে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে চর গণেশ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে ‘ওপিডি সাপোর্ট সেন্টার’ স্টিকার সাঁটানো। দরজায় দুটি তালা লাগানো হয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, এর মধ্যে একটি তালা প্রতিষ্ঠানটির কথিত কর্মকর্তারা লাগিয়ে পালিয়ে যান। অপর তালাটি ক্ষতিগ্রস্তরা এসে লাগিয়েছেন।
আমানতকারীরা জানান, হঠাৎ করে এলাকায় এসে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে খোলেন কার্যালয় ‘ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ নামের এনজিও। ওই প্রতিষ্ঠানের ৮ ব্যক্তি গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। টাকা যাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের আমানতের বিপরীতে সহজ কিস্তিতে ঋণ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালানো, মৃত্যুর পর ঋণ মওকুফ করা, সঞ্চয়ের দ্বিগুণ লাভ, ঘর নির্মাণ করে দেয়াসহ নানা আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু কয়েক মাস যাওয়ার পর হঠাৎ করে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে যান আমানত সংগ্রহকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সোনাগাজী পৌরসভার চর গণেশ এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাওয়াই রোডের মো. এয়াছিনের বাড়ির নিচতলার দুটি রুম ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় খোলা হয়। জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয় দেন। তিনি এলাকাবাসীকে জানান, তাদের এনজিওর নিবন্ধন রয়েছে, ঢাকার বনানী এলাকায় তাদের প্রধান কার্যালয়। ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে গ্রামের মানুষদের বুঝিয়ে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন। গত সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ শুরু হওয়ার কথা। এর আগেই ২৯ জুন রাতে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে জসিম উদ্দিন ও তার ৭ সহযোগী পালিয়ে গেছেন। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহবধূ সুমি আক্তার বলেন, বাড়ির অন্য নারীদের দেখে লাভের আশায় তিনি স্বামীর অজান্তে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তারা উধাও হওয়ার পর তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানান। এখন পারিবারিক কলহে তাঁর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে।
এছাড়া চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, তিনিও ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তার মতো আরও পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় বলেন, বিষয়টি শোনার পর পুলিশ গিয়ে তালাবদ্ধ কার্যালয় দেখতে পেয়েছে। যেসব ব্যক্তি টাকা সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, লোভে পড়ে কিছু মানুষ অনিবন্ধিত এনজিওতে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।