ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বিশেষ বিধান বাদ দিয়ে সার্ভিস রুলস প্রনয়নের দাবিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ বিএনপি সব জায়গায় রাজনীতি করতে চায় না : আবুল কালাম আজাদ উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরে মাহফুজকে হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে: নাহিদ সপ্তাহে ২ দিন হাসপাতালে যেতে পারবেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন জাগরন ফাউন্ডেশনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত পুলিশের সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম গ্রেফতার কৃষকরা একজোট হয়ে করল স্বেচ্ছায় খাল পরিষ্কার চার দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে জামায়াত-এনসিপিসহ আট দল ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে জাতিসংঘের নতুন প্রস্তাব পাস

বিশেষ বিধান বাদ দিয়ে সার্ভিস রুলস প্রনয়নের দাবিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ

সাংবাদিক

 

আইন বহির্ভূত “বিশেষ বিধান” বাদ দিয়ে সুসংগঠিত ও স্বচ্ছ সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর কর্মচারীরা। তাদের দাবি, খসড়া সার্ভিস রুলে প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার জন্য একটি বিতর্কিত “বিশেষ বিধান” রাখা হয়েছে, যা নিয়মিত কর্মচারীদের স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

২০১৩ সালে ডিএমটিসিএল গঠিত হলেও ১৩ বছর পরও এর কর্মচারীদের জন্য কোনো স্বতন্ত্র সার্ভিস রুল তৈরি হয়নি। সার্ভিস রুল না থাকায় কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ এবং হতাশা। ২০১৯ সালে একটি খসড়া সার্ভিস রুল তৈরি করা হলেও, প্রকল্পের জনবলের “অদৃশ্য চাপের” কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।

কর্মচারীরা জানান, তারা এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপদেষ্টা ডিএমটিসিএল-কে দ্রুত সার্ভিস রুল প্রস্তুত ও অনুমোদনের নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর ডিএমটিসিএল-এর ৬০তম বোর্ড সভায় ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে, সেই সময়সীমা পার হয়ে গেলেও সার্ভিস রুল প্রণয়ন করা হয়নি, যার ফলে কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। বর্তমানে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে সার্ভিস রুল প্রণয়নের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।

কর্মচারীদের অভিযোগ, খসড়া সার্ভিস রুলের একাদশ অধ্যায়ে একটি “বিশেষ বিধান” যুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারীদের ডিএমটিসিএল-এর স্থায়ী জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার এবং প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে তাদের কার্যকাল গণনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কর্মচারীদের মতে, এই বিধানটি অযৌক্তিক এবং প্রথা ও বিধিবিরোধী। তারা মনে করেন, এটি কার্যকর হলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

নিয়মিত কর্মচারীরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় এবং সরকারি নির্দেশনার উদ্ধৃতি দিয়ে এই বিশেষ বিধানকে অবৈধ বলে দাবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নম্বর ৪৬০/২০১৭-এর রায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থায়ী করাকে “Back door appointment” বা “পেছনের দরজা দিয়ে নিয়োগ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে বলা হয়েছে যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে অব্যাহতিপত্র হিসেবে গণ্য হবে।

ডিএমটিসিএল-এর নিয়মিত কর্মচারীরা এই “বিশেষ বিধান” বাতিল করে দ্রুত আইনসম্মত একটি সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, দেশের প্রচলিত আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি কর্মীবান্ধব সার্ভিস রুল তৈরি করা হোক। আইন লঙ্ঘন করে প্রকল্পের কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্ভিস রুল পাস করা হলে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মেট্রোরেল কতৃপক্ষকে ০৮/০৯/২০২৫ তারিখে উকিল নোটিশ প্রেয়ন করেন।

এবিষয়ে ডিএমটিসিএল এর কয়েকজন সহকারী ব্যবস্থাপক ও সেকশন ইন্জিনিয়ারের সাথে কথা বললে তারা বলেন , “সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সার্ভিস রুলস যেন হয় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে। প্রকল্পের যে সকল লোকবল আছে তাদেরকে দেশের আইনের তোয়াক্কা না করে বিশেষ সুবিধা দিয়ে যেন সার্ভিস রুলস পাস না করা হয়। সার্ভিস রুলস এ যেন বিশেষ বিধান নামক কোন বিধান বা প্রকল্পের কোন বিষয় উল্লেখ না থাকে। প্রকল্পে সাকূল্য বেতনে যোগদান করে কোন আইনের ভিত্তিতে তারা কোম্পানি গ্রেডে বেতন নিচ্ছে এবং প্রতি বছর বছর ৪% হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছে? এতে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে এই বিষয় টা তদন্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।“

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৫:৩২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫১১ Time View

বিশেষ বিধান বাদ দিয়ে সার্ভিস রুলস প্রনয়নের দাবিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ

আপডেটের সময় : ০৫:৩২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

আইন বহির্ভূত “বিশেষ বিধান” বাদ দিয়ে সুসংগঠিত ও স্বচ্ছ সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর কর্মচারীরা। তাদের দাবি, খসড়া সার্ভিস রুলে প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার জন্য একটি বিতর্কিত “বিশেষ বিধান” রাখা হয়েছে, যা নিয়মিত কর্মচারীদের স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

২০১৩ সালে ডিএমটিসিএল গঠিত হলেও ১৩ বছর পরও এর কর্মচারীদের জন্য কোনো স্বতন্ত্র সার্ভিস রুল তৈরি হয়নি। সার্ভিস রুল না থাকায় কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ এবং হতাশা। ২০১৯ সালে একটি খসড়া সার্ভিস রুল তৈরি করা হলেও, প্রকল্পের জনবলের “অদৃশ্য চাপের” কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।

কর্মচারীরা জানান, তারা এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপদেষ্টা ডিএমটিসিএল-কে দ্রুত সার্ভিস রুল প্রস্তুত ও অনুমোদনের নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর ডিএমটিসিএল-এর ৬০তম বোর্ড সভায় ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে, সেই সময়সীমা পার হয়ে গেলেও সার্ভিস রুল প্রণয়ন করা হয়নি, যার ফলে কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। বর্তমানে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে সার্ভিস রুল প্রণয়নের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।

কর্মচারীদের অভিযোগ, খসড়া সার্ভিস রুলের একাদশ অধ্যায়ে একটি “বিশেষ বিধান” যুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারীদের ডিএমটিসিএল-এর স্থায়ী জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার এবং প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে তাদের কার্যকাল গণনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কর্মচারীদের মতে, এই বিধানটি অযৌক্তিক এবং প্রথা ও বিধিবিরোধী। তারা মনে করেন, এটি কার্যকর হলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

নিয়মিত কর্মচারীরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় এবং সরকারি নির্দেশনার উদ্ধৃতি দিয়ে এই বিশেষ বিধানকে অবৈধ বলে দাবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নম্বর ৪৬০/২০১৭-এর রায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থায়ী করাকে “Back door appointment” বা “পেছনের দরজা দিয়ে নিয়োগ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে বলা হয়েছে যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে অব্যাহতিপত্র হিসেবে গণ্য হবে।

ডিএমটিসিএল-এর নিয়মিত কর্মচারীরা এই “বিশেষ বিধান” বাতিল করে দ্রুত আইনসম্মত একটি সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, দেশের প্রচলিত আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি কর্মীবান্ধব সার্ভিস রুল তৈরি করা হোক। আইন লঙ্ঘন করে প্রকল্পের কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্ভিস রুল পাস করা হলে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মেট্রোরেল কতৃপক্ষকে ০৮/০৯/২০২৫ তারিখে উকিল নোটিশ প্রেয়ন করেন।

এবিষয়ে ডিএমটিসিএল এর কয়েকজন সহকারী ব্যবস্থাপক ও সেকশন ইন্জিনিয়ারের সাথে কথা বললে তারা বলেন , “সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সার্ভিস রুলস যেন হয় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে। প্রকল্পের যে সকল লোকবল আছে তাদেরকে দেশের আইনের তোয়াক্কা না করে বিশেষ সুবিধা দিয়ে যেন সার্ভিস রুলস পাস না করা হয়। সার্ভিস রুলস এ যেন বিশেষ বিধান নামক কোন বিধান বা প্রকল্পের কোন বিষয় উল্লেখ না থাকে। প্রকল্পে সাকূল্য বেতনে যোগদান করে কোন আইনের ভিত্তিতে তারা কোম্পানি গ্রেডে বেতন নিচ্ছে এবং প্রতি বছর বছর ৪% হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছে? এতে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে এই বিষয় টা তদন্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।“