দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজারে গুদাম ভোগ্যপণ্যে ঠাসা। তবুও অস্থির পণ্যের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ভোগ্য এ পণ্যটির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১০৫ টাকায়।
পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভোজ্যতেল ও আলুর দাম। ভোজ্যতেল প্রতি লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মূলত ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাবে খুচরা বাজারেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। যদিও পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই।
চট্টগ্রামে বাজারে নজরদারির অভাবে দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। কোনো পণ্যের দামই কমার লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। বেশির ভাগ পণ্যই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে। অথচ আলু সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্ট বা আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম কমতে দিচ্ছে না। তারা পুরো বাজারকে জিম্মি করে অতিরিক্ত দামে পণ্যটি বিক্রি করছে। অথচ আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির খবর ছড়িয়ে পড়লেই কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম কমে যেত। এবার সেরকম কিছু ঘটেনি।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত সরকার রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। তারপরও কমছে না পণ্যটির দাম।
আড়তদাররা বলছেন, দেশের স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও আগের চেয়ে কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে ভালোমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। আর পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকার বেশি দামে। খুচরা বাজারে এ পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯৫ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে তা ৫ টাকা কম-বেশি। এদিকে আলুর দাম অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। কিছু দোকানে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের আড়তদারদের অভিযোগ-উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে বাড়তি দামে পণ্যটি বিক্রি করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। শুক্রবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়, যা সাত দিন আগেও ছিল ১৫৫ টাকা। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮-১৭০ টাকায়, যা সাত দিন আগেও ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকায়।
দেশি ও আমদানি করা রসুনের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ২১০ টাকায়। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। আমদানি করা আদার দাম পড়ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। আর দেশি আদার কেজি পড়ছে সাড়ে তিনশ টাকার ওপরে। এ ছাড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে।
এদিকে বাজারে বেড়েই চলেছে কাঁচামরিচের দাম। প্রতি কেজির দাম ঠেকেছে ৩৫০ টাকায়। তবে দেশি ও হাইব্রিড মরিচের দামে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। নগরীর কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে স্থানভেদে প্রতি কেজি দেশি কাঁচামরিচের দাম ৩০০-৩০৫ টাকা।
বাজারদর
বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সবজির দামও। প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে, যা আগে ছিল আড়াইশ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। এ ছাড়া মাগুর মাছ ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২১০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কই মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৪০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, পাঁচ মিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেশি কই ১০০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আড়ই মাছ ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, বাইলা মাছ ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।