সরকারি চাকরির সব ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাসের দাবিতে সোমবারও (৮ জুলাই) ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কোটা বাতিলের বিষয়ে তারা আবারও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
রোববার (৭ জুন) রাত ৮টায় শাহবাগ মোড়ে কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান ব্লকেড কর্মসূচির শেষে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম।
চলমান চার দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এক দফা দাবিতে নামিয়ে এনে ফের সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে মূল ব্লকেড আন্দোলন শুরু হবে। তাছাড়া একই সময়ে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এই ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হবে।
শিক্ষার্থীদের বর্তমান এক দফা দাবি হলো- সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ব্লকেড কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আমাদের দাবি যে যৌক্তিক তা ২০১৮ সালেই প্রমাণ করেছি। তখন তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবারও তিনি কার্যকর প্রদক্ষেপ নেবেন বলে আশাকরি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমাদের দাবি হয় পূরণ হবে নয়তো আমাদের দেশ ছাড়তে হবে। যে দেশে মেধাবীদের সম্মান নেই সে দেশে মেধাবীরা থাকে না।
তারা বলেন, সকল ক্ষেত্রে, সকল ধরনের কোটা বাতিল করতে হবে। সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কোটা বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আমাদের কর্মসূচি চলবে। আগামীকাল থেকে আমাদের পূর্ব ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-বর্জন চলমান থাকবে। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সারাদেশে ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে।
আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে জানিয়ে সমন্বয়কারীরা বলেন, আজকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ব্লক করেছি, কাল ফার্মগেট ছাড়িয়ে যাবো।
এর আগে, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম ঘোষিত সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ-চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ৭ম দিনে রোববার বিকেল ৪টায় এই অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ, চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেন। ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, গুলিস্তান-নিউ মার্কেট, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা, একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে, শনিবার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শেষে সারা দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মহাসড়ক অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেন। যাকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ হিসেবে ঘোষণা করেন।