ঢাকা , রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদম ব্যবসার নামে তিন জেলায় প্রতারণা, ৪ কোটি টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক

বড়াইগ্রাম, নাটোর প্রতিনিধি

 

আদম ব্যবসার নামে নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় শত শত মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় ৪ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েন বাজার এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল খালেক অতীতে গরু চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ছায়া ব্যবহার করে তিনি আদম ব্যবসার ছদ্মবেশে প্রতারণার নতুন কৌশল শুরু করেন। বিদেশে (মালয়েশিয়া) পাঠানো ও ওমরা হজের নামে নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর ও গুরদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ৩ কোটি টাকা।

কিন্তু কাউকেই বিদেশ পাঠাতে না পেরে বছরের পর বছর ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কালিয়াকোর গ্রামে ভাড়া অফিস খুলে আবারও প্রতারণার জাল বিছান। ওই এলাকার কালিয়াকোর, সুজাগ্রাম, চাচকিয়া, জন্তিহার ও বেতুয়ান গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে তিনি আরও প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দেন।

সেখান থেকেও উধাও হয়ে যান পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি বাজারে। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে থেকে প্রতারণা চালিয়ে পার্শ্ববর্তী চাটমোহর, দাশুরিয়া, রাজাপুর, অর্জুনপুর ও মাছপাড়া গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আরও অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফের পলাতক হন।

ভুক্তভোগীরা জানান, বিদেশ যাওয়ার আশায় কেউ শেষ সম্বল বিক্রি করেছেন, কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন, আবার কেউ উচ্চ সুদে টাকা ধার করে আব্দুল খালেকের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, প্রতারক আব্দুল খালেক এই অর্থ দিয়ে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং স্ত্রীর নামে জমি ও বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতারকের বিরুদ্ধে বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরে চারজন ভুক্তভোগী নাটোর আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতে দাখিলকৃত মামলায় আব্দুল খালেকের দেওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের চারটি চেকও সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিন জেলার শত শত ভুক্তভোগী প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন—যত দ্রুত সম্ভব পলাতক এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৬:৫০:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫৩৫ Time View

আদম ব্যবসার নামে তিন জেলায় প্রতারণা, ৪ কোটি টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক

আপডেটের সময় : ০৬:৫০:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

আদম ব্যবসার নামে নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় শত শত মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় ৪ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েন বাজার এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল খালেক অতীতে গরু চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ছায়া ব্যবহার করে তিনি আদম ব্যবসার ছদ্মবেশে প্রতারণার নতুন কৌশল শুরু করেন। বিদেশে (মালয়েশিয়া) পাঠানো ও ওমরা হজের নামে নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর ও গুরদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ৩ কোটি টাকা।

কিন্তু কাউকেই বিদেশ পাঠাতে না পেরে বছরের পর বছর ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কালিয়াকোর গ্রামে ভাড়া অফিস খুলে আবারও প্রতারণার জাল বিছান। ওই এলাকার কালিয়াকোর, সুজাগ্রাম, চাচকিয়া, জন্তিহার ও বেতুয়ান গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে তিনি আরও প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দেন।

সেখান থেকেও উধাও হয়ে যান পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি বাজারে। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে থেকে প্রতারণা চালিয়ে পার্শ্ববর্তী চাটমোহর, দাশুরিয়া, রাজাপুর, অর্জুনপুর ও মাছপাড়া গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আরও অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফের পলাতক হন।

ভুক্তভোগীরা জানান, বিদেশ যাওয়ার আশায় কেউ শেষ সম্বল বিক্রি করেছেন, কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন, আবার কেউ উচ্চ সুদে টাকা ধার করে আব্দুল খালেকের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, প্রতারক আব্দুল খালেক এই অর্থ দিয়ে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং স্ত্রীর নামে জমি ও বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতারকের বিরুদ্ধে বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরে চারজন ভুক্তভোগী নাটোর আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতে দাখিলকৃত মামলায় আব্দুল খালেকের দেওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের চারটি চেকও সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিন জেলার শত শত ভুক্তভোগী প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন—যত দ্রুত সম্ভব পলাতক এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক