অলিয়ার মীর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার তারাটিয়া আলহাজ ফজিতননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ভাঙাচোরা। দুর্ভোগ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়টির এমন অবস্থা চললেও প্রতিকার মিলছে না ভবন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ভাঙ্গাচোরা শ্রেণীর কক্ষ, পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ভবন নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। রাজনৈতিক বিভেদের কারণে উন্নয়নে বৈষম্যের শিকার ছিল বিদ্যালয়টি। কবে নতুন ভবন হবে তাও বলতে পারেন না উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
তারাটিয়া আলহাজ্ব ফজিতননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায় ২০০১-২০০২ সালে এবং মাধ্যমিক পর্যায় ২০১৮-২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে ৬৭২ শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৫০ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ১৬০ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ১৫০ জন, নবম শ্রেণিতে ১০২ জন এবং দশম শ্রেণিতে ১১০ জন। বিদ্যালয়টি থেকে ১১০ শিক্ষার্থী ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। তার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১১৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯৫ জন এবং ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১১০ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯২ জন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছে ১৫ জন এবং কর্মচারী ৬ জন। শ্রেণিকক্ষ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে তাদের বসার জায়গা সংকট। ৬৭২ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৯টি কক্ষ। তাও ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে চাল চুয়ে পানি পড়ে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। লেখাপড়ার মান ভালো হওয়া সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষের অভাব ও শ্রেণিকক্ষ ভাঙাচোরার কারণে সন্তানদের ভর্তি করতে চান না অনেক অভিভাবক।
দেওয়ানগঞ্জ সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে তারাটিয়া আলহাজ ফজিতননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। এ স্কুলঘরের বেড়া ভাঙাচোরা, চালও মরিচা ধরে প্রায় নষ্ট। বৃষ্টি হলে চাল চুয়ে পানি পড়ে। তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিলম্বিত হয়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিগত সরকার এ বিদ্যালয়টির উন্নয়নে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেলিনা আক্তার জানায়, বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান ভালো। শ্রেণি সংকট ও ভাঙাচোরা হওয়ায় ক্লাস করতে কষ্ট হয়। বর্ষাকালে ক্লাস করা কঠিন হয়। বৃষ্টি হলে চাল চুয়ে পানি পড়ে। তখন ক্লাস বাদ দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হয়।
নবম শ্রেণির উর্মি আক্তার বলে, ‘অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের স্কুলের শিক্ষার মান ভালো। নারীশিক্ষায় বিদ্যালয়টি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। লেখাপড়া ভালো হওয়ায় শ্রেণিকক্ষ ভাঙাচোরা জেনেও এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। সরকারের কাছে আমরা দ্রুত আধুনিক ভবন চাই।’
শিক্ষার্থীর অভিভাবক মীর সেলিমের ভাষ্য, এ উপজেলায় এমন স্কুল দ্বিতীয়টি নেই। আশপাশের সব স্কুলে ভবন হচ্ছে কিন্তু তারাটিয়া আলহাজ ফজিতননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এখনও
ভবন নির্মাণ হচ্ছে না। মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
অভিভাবক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘তারাটিয়া আলহাজ ফজিতননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া তারাটিয়া, কাঠারবিলসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নারীশিক্ষার জন্য কোনো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নেই। বিদ্যালয়টির সুখ্যাতি রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ভালো হয়। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ ভাঙাচোরা ও সংকটের কারণে এখন আমাদের মতো অনেক অভিভাবক সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না। বিদ্যালয়টিতে ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।
শিক্ষক হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। না হলে শিক্ষার মান নষ্ট হবে।
প্রধান শিক্ষক আবু তালেব বলেন, ‘আমি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সে কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন হয়নি। বিদ্যালয়টিতে যে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তা টিনশেড এবং ভাঙাচোরা। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফা আক্তার জানান, সরকার এ বিষয়ে যখন পদক্ষেপ নেয় এবং যখন তথ্য চাইবে তখন তথ্য দেবেন তারা। তাদের করণীয় কিছু নেই। এলাকার এমপি-মন্ত্রীরা এসব করান। এভাবেই এ বিষয়গুলো চলে আসছে। তারপরও কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে