ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
RAW জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে : এম এ মালিক ‘আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী’ ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ৭ বাংলাদেশির রাতে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে জিয়ারতে গেলেন খালেদা জিয়া ঝালকাঠি–১ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হাবিবুর রহমান সেলিম রেজার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ আমরা আর দাসত্বের মধ্যে থাকতে চাই না: প্রধান উপদেষ্টা ডিজিএফআইয়ের সাবেক যে পাঁচ ডিজিকে গ্রেফতারে পরোয়ানা আগামী ১৫ অক্টোবর কাপ্তাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে চ্যারিটি শো “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” গাইবেন জি বাংলার সারেগামাপা শিল্পী শুভ দাশ বড়াইগ্রামে শহীদ সানাউল্লাহ নূর বাবুর ১৫তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি

দেড় যুগ পর গণমাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে উজ্জীবিত বিএনপি

সাংবাদিক

দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন-এ সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান যেমন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন, তেমনি জাতির জন্য দিয়েছেন এক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। অনেকেই একে ‘রাষ্ট্রনায়কোচিত’ ও ‘আবেগঘন’ অভিব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিবিসি বাংলায় প্রচারিত সাক্ষাৎকারকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ও আলোচনায় মুখর বিএনপি অঙ্গন। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন-এ সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান যেমন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন, তেমনি জাতির জন্য দিয়েছেন এক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। অনেকেই একে ‘রাষ্ট্রনায়কোচিত’ ও ‘আবেগঘন’ অভিব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।

বিএনপির এই কাণ্ডারির সাক্ষাৎকার নিয়ে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেটিজেনরা প্রশংসা করেছেন।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনো বিতর্কিত কথা না বলায় তার প্রশংসা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে যুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শিশির বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে সাক্ষাৎকারে শব্দচয়ন করেছেন। সকালে উঠে বিবিসির সাক্ষাৎকার শুনেছি। অত্যন্ত গাইডেড কথা বলেছেন তিনি। সুচিন্তিত জবাব দিয়েছেন।’

শিশির মনির আরো বলেন, ‘তারেক রহমান এমনভাবে শব্দগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন, যাতে কেউ আলাদা করে কোনো শব্দ নিয়ে ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে না পারে। তার এ সাক্ষাৎকার একটি শুভ সূচনা হিসেবে আমি মনে করি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই তার কথাবার্তা ও যে মনোভাব তিনি প্রকাশ করবেন, তা জাতির জন্য শিক্ষণীয় হবে- এটাই আমার মতামত।’

রাজনৈতিক নেতাদের প্রায়ই হিসাব-নিকাশ করে কথা বলতে হয় উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, সাক্ষাৎকার দেয়ার আগে সম্ভবত তিনি (তারেক) অভিজ্ঞ কারো বা পেশাদার পরামর্শ নিয়েছেন। এ সাক্ষাৎকারটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে দলিল হিসেবে থেকে যাবে।’

শিশির মনির বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে শব্দচয়ন করেছেন বলে আমার ধারণা। তিনি চেয়েছেন, তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। প্রাথমিকভাবে এটা একটা ভালো শুরু। বাকিটা সময়ই বলবে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, ‘এ সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য বলি বা মতপ্রকাশ বা দিকনির্দেশনা যাই বলি না কেন, এ সময়ে উনার বক্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি পার করছে-ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, সরকার কিভাবে গঠিত হবে-এসব নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন। তারেক রহমানের বক্তব্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই স্পষ্ট বার্তা পেয়েছে, কিভাবে আগামীতে দেশ ও সরকার পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে।’

তারেক রহমানের বক্তব্যের কোন অংশ তাকে সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে-এমন প্রশ্নে আব্দুল হালিম বলেন, ‘তিনি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এবং হিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ পরিচালনার কথা বলেছেন-এটাই সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক।’

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ‘অসাধারণ। একজন ম্যাচিউরিটি লিডার। আমরা গর্বিত।’

তারেক রহমানের বক্তব্যে প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান নতুন বার্তা দেন না, কিন্তু তার বক্তব্যে আক্রমণ নেই, প্রতি-হিংসা নেই। এটাই জাতি প্রত্যাশা করে।’

কোন অংশ তাকে সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে জানতে চাইলে জিলানী বলেন, ‘উনার উদারতা। যখন ‘২৪ সালের আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড’ প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তিনি বলেছেন-জনগণ। এটাই তার উদারতা। উনার বাসভবন, ছোট ভাই, মা-পরিবার নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘অনেক বছর পর তারেক রহমান গণমাধ্যমে কথা বলেছেন-এটা রীতিমতো সারাদেশকে নাড়া দিয়েছে। এ সাক্ষাৎকারে দেশের কথা, সমন্বয়ের কথা, আবেগ ও নস্টালজিয়ার সাথে দেশ গঠনের মনস্তত্ত্ব ফুটে উঠেছে।’

তারেক রহমানের বার্তায় প্রভাব প্রসঙ্গে নয়ন বলেন, ‘সবার প্রতি সম্মান রেখে কথা বলেছেন, কাউকে ছোট করেননি, জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। আমরা তাকে দেশনায়ক বলি-আজ তিনি দেশনায়কোচিত বার্তা দিয়েছেন।’

নয়নের মতে, সবচেয়ে আবেগঘন অংশটি ছিল তারেক রহমানের পারিবারিক স্মৃতি : ‘উনি বলেছেন-আমার একটা বাসা ছিল, সুস্থ মাকে রেখে গেছি, ছোট ভাইকে রেখে গেছি। এই অংশে আমরা সবাই আপ্লুত হয়েছি।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি সাক্ষাৎকারটা পুরো শুনেছি এবং পড়েছি। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি সাবলীলভাবে, গুছিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এতে সবার নজর কেড়েছেন।’

তিনি মনে করেন, ‘এ সাক্ষাৎকার জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে কোন অংশ? ‘তিনি বাংলাদেশে আসার বিষয়ে একটি গঠনমূলক ধারণা দিয়েছেন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যেভাবে সবাইকে যুক্ত করেছেন, সেটা বিশেষভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক।’

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তারেক রহমান একজন স্ট্রেটম্যানের মতো বক্তব্য দিয়েছেন, যা তাকে আবারো অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আগামী নির্বাচন ও সংগঠন পরিচালনা এবং রাষ্ট্রপরিচালনা তরুণ মেধাবীদের পাশাপাশি অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করে জনগণের কল্যাণের কাজ করতে হবে এমন বিষয়টি নিয়ে এসেছেন ইন্টারভিউয়ে। সবার আগে বাংলাদেশ-যেটা আমাদের দল বরাবরই বিশ্বাস করে যার মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য বার্তাটা স্পষ্ট।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, ‘সাক্ষাৎকারটি আগাগোড়া যতটুকু ছিল সবটুকুই নাড়া দিয়েছে। তবে একটা জিনিস নাড়া দিয়েছে, আকর্ষণীয় বিষয়টা হচ্ছে, উনি (তারেক রহমান) বলেছেন, ‘১৭ বছর ধরে আমি দেশের বাইরে আছি। আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি, যে ভাইকে রেখে গিয়েছিলেন। উনার সুস্থ মা অসুস্থ হয়ে গেছেন। তারপর যে বাড়িতে ছিলেন সে বাড়িটা আর নেই, অস্তিত্ব নেই। দুঃখ বা উনার আবেগের জায়গা থেকে এককভাবে না রেখে উনি সমগ্র বাংলাদেশের নির্যাতিত মজলুম মানুষদের পক্ষে কথা বলেছেন, যে এই দৃশ্যটা শুধু আমার একার না এটা সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের, যারা বিরোধী আন্দোলনে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল। যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে তারা প্রত্যেকেই এ ধরনের একটা অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে।’

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘তারেক রহমান অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছেন- রাষ্ট্রনায়কোচিত। উনার বক্তব্যে সত্য বিষয়গুলো উঠে এসেছে। বিএনপি নেতাকর্মী এবং দেশবাসী উজ্জীবিত হয়েছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘বিবিসি বাংলায় ওনার বক্তব্যের শেষ অংশ, যেখানে উনি বলেন-আমার বাসা ছিল, সুস্থ ভাই ছিল, সুস্থ মা ছিল-এটা যেকোনো মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়ে যায়।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে, আশান্বিত হয়েছে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি একজন স্টেটম্যানের মতো কথা বলেছেন।’

তিনি মনে করেন, ‘আজকের বার্তা বিএনপি এবং জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

যে অংশ তাকে নাড়া দিয়েছে তা হলো-‘তার স্মৃতি বিজড়িত বাসা, তার বাবা, ছোট ভাই, মা-এই প্রসঙ্গগুলো খুবই হৃদয়বিদারক।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষ এমনকি দেশের বিশিষ্টজনদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে-তিনি জাতির প্রত্যাশার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’

তার বক্তব্যের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অংশ সম্পর্কে আলাল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, সুস্থ মাকে রেখে গেছেন, ছোট ভাইকে রেখে গেছেন। তিনি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন-তা শুধু ব্যক্তি নয়, বরং দেশের নির্যাতিত মানুষের সাথেও একাকার হয়েছেন।’

দলের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে আলাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে ভবিষ্যতের রূপরেখা স্পষ্ট। তিনি ৩১ দফার কথা বলেছেন, সংস্কারের কথা বলেছেন, বিচারের কথা বলেছেন-যা আমাদের রাজনৈতিক যাত্রায় নতুন দিশা দেবে।’

সমগ্র প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট-বিএনপির নেতারা আজ তারেক রহমানের বক্তব্যে নতুন প্রেরণা, আত্মবিশ্বাস ও দিকনির্দেশনা পেয়েছেন।

তাদের ভাষায়- ‘এটি শুধু একটি সাক্ষাৎকার নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির জন্য এক রাষ্ট্রনায়কোচিত ঘোষণাপত্র।’

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত

 

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৫:১০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
৫৩০ Time View

দেড় যুগ পর গণমাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে উজ্জীবিত বিএনপি

আপডেটের সময় : ০৫:১০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন-এ সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান যেমন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন, তেমনি জাতির জন্য দিয়েছেন এক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। অনেকেই একে ‘রাষ্ট্রনায়কোচিত’ ও ‘আবেগঘন’ অভিব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিবিসি বাংলায় প্রচারিত সাক্ষাৎকারকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ও আলোচনায় মুখর বিএনপি অঙ্গন। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন-এ সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান যেমন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন, তেমনি জাতির জন্য দিয়েছেন এক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। অনেকেই একে ‘রাষ্ট্রনায়কোচিত’ ও ‘আবেগঘন’ অভিব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।

বিএনপির এই কাণ্ডারির সাক্ষাৎকার নিয়ে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেটিজেনরা প্রশংসা করেছেন।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনো বিতর্কিত কথা না বলায় তার প্রশংসা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে যুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শিশির বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে সাক্ষাৎকারে শব্দচয়ন করেছেন। সকালে উঠে বিবিসির সাক্ষাৎকার শুনেছি। অত্যন্ত গাইডেড কথা বলেছেন তিনি। সুচিন্তিত জবাব দিয়েছেন।’

শিশির মনির আরো বলেন, ‘তারেক রহমান এমনভাবে শব্দগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন, যাতে কেউ আলাদা করে কোনো শব্দ নিয়ে ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে না পারে। তার এ সাক্ষাৎকার একটি শুভ সূচনা হিসেবে আমি মনে করি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই তার কথাবার্তা ও যে মনোভাব তিনি প্রকাশ করবেন, তা জাতির জন্য শিক্ষণীয় হবে- এটাই আমার মতামত।’

রাজনৈতিক নেতাদের প্রায়ই হিসাব-নিকাশ করে কথা বলতে হয় উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, সাক্ষাৎকার দেয়ার আগে সম্ভবত তিনি (তারেক) অভিজ্ঞ কারো বা পেশাদার পরামর্শ নিয়েছেন। এ সাক্ষাৎকারটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে দলিল হিসেবে থেকে যাবে।’

শিশির মনির বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে শব্দচয়ন করেছেন বলে আমার ধারণা। তিনি চেয়েছেন, তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। প্রাথমিকভাবে এটা একটা ভালো শুরু। বাকিটা সময়ই বলবে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, ‘এ সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য বলি বা মতপ্রকাশ বা দিকনির্দেশনা যাই বলি না কেন, এ সময়ে উনার বক্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি পার করছে-ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, সরকার কিভাবে গঠিত হবে-এসব নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন। তারেক রহমানের বক্তব্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই স্পষ্ট বার্তা পেয়েছে, কিভাবে আগামীতে দেশ ও সরকার পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে।’

তারেক রহমানের বক্তব্যের কোন অংশ তাকে সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে-এমন প্রশ্নে আব্দুল হালিম বলেন, ‘তিনি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এবং হিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ পরিচালনার কথা বলেছেন-এটাই সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক।’

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ‘অসাধারণ। একজন ম্যাচিউরিটি লিডার। আমরা গর্বিত।’

তারেক রহমানের বক্তব্যে প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান নতুন বার্তা দেন না, কিন্তু তার বক্তব্যে আক্রমণ নেই, প্রতি-হিংসা নেই। এটাই জাতি প্রত্যাশা করে।’

কোন অংশ তাকে সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে জানতে চাইলে জিলানী বলেন, ‘উনার উদারতা। যখন ‘২৪ সালের আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড’ প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তিনি বলেছেন-জনগণ। এটাই তার উদারতা। উনার বাসভবন, ছোট ভাই, মা-পরিবার নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘অনেক বছর পর তারেক রহমান গণমাধ্যমে কথা বলেছেন-এটা রীতিমতো সারাদেশকে নাড়া দিয়েছে। এ সাক্ষাৎকারে দেশের কথা, সমন্বয়ের কথা, আবেগ ও নস্টালজিয়ার সাথে দেশ গঠনের মনস্তত্ত্ব ফুটে উঠেছে।’

তারেক রহমানের বার্তায় প্রভাব প্রসঙ্গে নয়ন বলেন, ‘সবার প্রতি সম্মান রেখে কথা বলেছেন, কাউকে ছোট করেননি, জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। আমরা তাকে দেশনায়ক বলি-আজ তিনি দেশনায়কোচিত বার্তা দিয়েছেন।’

নয়নের মতে, সবচেয়ে আবেগঘন অংশটি ছিল তারেক রহমানের পারিবারিক স্মৃতি : ‘উনি বলেছেন-আমার একটা বাসা ছিল, সুস্থ মাকে রেখে গেছি, ছোট ভাইকে রেখে গেছি। এই অংশে আমরা সবাই আপ্লুত হয়েছি।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি সাক্ষাৎকারটা পুরো শুনেছি এবং পড়েছি। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি সাবলীলভাবে, গুছিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এতে সবার নজর কেড়েছেন।’

তিনি মনে করেন, ‘এ সাক্ষাৎকার জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে কোন অংশ? ‘তিনি বাংলাদেশে আসার বিষয়ে একটি গঠনমূলক ধারণা দিয়েছেন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যেভাবে সবাইকে যুক্ত করেছেন, সেটা বিশেষভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক।’

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তারেক রহমান একজন স্ট্রেটম্যানের মতো বক্তব্য দিয়েছেন, যা তাকে আবারো অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আগামী নির্বাচন ও সংগঠন পরিচালনা এবং রাষ্ট্রপরিচালনা তরুণ মেধাবীদের পাশাপাশি অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করে জনগণের কল্যাণের কাজ করতে হবে এমন বিষয়টি নিয়ে এসেছেন ইন্টারভিউয়ে। সবার আগে বাংলাদেশ-যেটা আমাদের দল বরাবরই বিশ্বাস করে যার মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য বার্তাটা স্পষ্ট।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, ‘সাক্ষাৎকারটি আগাগোড়া যতটুকু ছিল সবটুকুই নাড়া দিয়েছে। তবে একটা জিনিস নাড়া দিয়েছে, আকর্ষণীয় বিষয়টা হচ্ছে, উনি (তারেক রহমান) বলেছেন, ‘১৭ বছর ধরে আমি দেশের বাইরে আছি। আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি, যে ভাইকে রেখে গিয়েছিলেন। উনার সুস্থ মা অসুস্থ হয়ে গেছেন। তারপর যে বাড়িতে ছিলেন সে বাড়িটা আর নেই, অস্তিত্ব নেই। দুঃখ বা উনার আবেগের জায়গা থেকে এককভাবে না রেখে উনি সমগ্র বাংলাদেশের নির্যাতিত মজলুম মানুষদের পক্ষে কথা বলেছেন, যে এই দৃশ্যটা শুধু আমার একার না এটা সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের, যারা বিরোধী আন্দোলনে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল। যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে তারা প্রত্যেকেই এ ধরনের একটা অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে।’

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘তারেক রহমান অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছেন- রাষ্ট্রনায়কোচিত। উনার বক্তব্যে সত্য বিষয়গুলো উঠে এসেছে। বিএনপি নেতাকর্মী এবং দেশবাসী উজ্জীবিত হয়েছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘বিবিসি বাংলায় ওনার বক্তব্যের শেষ অংশ, যেখানে উনি বলেন-আমার বাসা ছিল, সুস্থ ভাই ছিল, সুস্থ মা ছিল-এটা যেকোনো মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়ে যায়।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে, আশান্বিত হয়েছে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি একজন স্টেটম্যানের মতো কথা বলেছেন।’

তিনি মনে করেন, ‘আজকের বার্তা বিএনপি এবং জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

যে অংশ তাকে নাড়া দিয়েছে তা হলো-‘তার স্মৃতি বিজড়িত বাসা, তার বাবা, ছোট ভাই, মা-এই প্রসঙ্গগুলো খুবই হৃদয়বিদারক।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষ এমনকি দেশের বিশিষ্টজনদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে-তিনি জাতির প্রত্যাশার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’

তার বক্তব্যের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অংশ সম্পর্কে আলাল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, সুস্থ মাকে রেখে গেছেন, ছোট ভাইকে রেখে গেছেন। তিনি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন-তা শুধু ব্যক্তি নয়, বরং দেশের নির্যাতিত মানুষের সাথেও একাকার হয়েছেন।’

দলের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে আলাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে ভবিষ্যতের রূপরেখা স্পষ্ট। তিনি ৩১ দফার কথা বলেছেন, সংস্কারের কথা বলেছেন, বিচারের কথা বলেছেন-যা আমাদের রাজনৈতিক যাত্রায় নতুন দিশা দেবে।’

সমগ্র প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট-বিএনপির নেতারা আজ তারেক রহমানের বক্তব্যে নতুন প্রেরণা, আত্মবিশ্বাস ও দিকনির্দেশনা পেয়েছেন।

তাদের ভাষায়- ‘এটি শুধু একটি সাক্ষাৎকার নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির জন্য এক রাষ্ট্রনায়কোচিত ঘোষণাপত্র।’

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত