ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পশ্চিমাঞ্চল রেলে ভয়াবহ দুর্নীতি, সাবেক ২ জিএমসহ আসামি ১৮ জন উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে: প্রধান উপদেষ্টা কথার কথা নয়, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) স্থাপনের জোর দাবি স্ত্রীর লাশ ফ্রিজে রেখে নজরুল মেয়েকে বলেছিলেন ‘মা অন্যের সঙ্গে পালিয়েছে’ মিথ্যা মামলা করায় বাদীকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড, আসামি বেকসুর খালাস খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাকে স্থায়ীভাবে অপসারণ আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় জামগড়া আর্মি ক্যাম্প সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র সহ ৫ জন গ্রেফতার প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন স্মরণোৎসব, মেলা শুরু শুক্রবার

উৎসবমুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৬ বছর পর চাকসুতে ভোটযুদ্ধ আজ

সাংবাদিক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন আজ। দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর অপেক্ষার পর শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সচল হতে যাচ্ছে চাকসু। নির্বাচনে ১৩টি পূর্ণাঙ্গ, ২টি আংশিক প্যানেলে ৯০৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। টানা উনিশ দিন পর সোমবার রাতে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়। তবে মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্র্থীরা অনলাইনে প্রচারণায় মেতেছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন। নির্বাচন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এর আগে ১৯৯০ সালে হয়েছিল চাকসু নির্বাচন। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর বন্ধ ছিল। এদিকে নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫১৬ শিক্ষার্থী ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যেখানে ১৬ হাজার ১৮৯ ছাত্র ও ১১ হাজার ৩২৯ ছাত্রী ভোটার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ও প্রকৌশল অনুষদের ১৫টি কেন্দ্রে মোট ৬০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩০০টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ৭০০টি গোপন বুথ। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা ভোটকেন্দ্র রাখা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চবি প্রশাসনও অবাধ ভয়ভীতিহীন নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে। ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। মঙ্গলবার চাকসু ভবনের সামনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কোনো হুমকি নেই। শুধু বাইরে থেকে ইন্ধন না এলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যাবে।

ভিপি প্রার্থী : ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ইব্রাহীম হোসেন রনি, দ্রোহ পর্ষদের ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন মাহফুজুর রহমান, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ আব্দুর রহমান রবিন, বৈচিত্র্যের ঐক্যের ধ্রুব বড়ুয়া, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্যের তাওসিফ মুত্তাকী চৌধুরী, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের তামজিদ উদ্দিন, রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটির কেফায়েত উল্লাহ, স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন তানজীর রহমান আরাফাত, মুহাম্মদ ফয়সাল সিকদার, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. আজিজুল হক, আহসান হাবীব (কবি), মো. ইয়াছিন আরাফাত, মো. মাহফুজুর রহমান, মোহাম্মদ শহিদুল আলম রিফাত (এস এ রিফাত), রিজাউর রহমান, শুভ্র জ্যোতি মণ্ডল, সীমান্ত দত্ত কাব্য, হাবিবুর রহমান।

জিএস প্রার্থী : ছাত্রদলের মো. শাফায়েত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব, দ্রোহ পর্ষদের ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু, বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্যের চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের রশিদ দিনার, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ আব্দুর রহমান, বৈচিত্র্যের ঐক্যের সুদর্শন চাকমা, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের মুহাম্মদ ইয়াসিন উদ্দিন, সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্যের সাজ্জাদ হোসেন, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের সাকিব মাহমুদ রুমি, রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটির কাজী মো. শাহারিয়ার উল্ল্যাহ, স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন আবদুল্লাহ যায়েদ, আল যুবায়ের তুর্য, নূর মোহাম্মদ বাপ্পী, মিনহাজুর রহমান মির্জা, মুহাম্মদ খোরশেদ, মো. আরাফাত (জিহাদ আরাফাত), মো. ইলিয়াছ (সানি মুন্না), মো. রাহেনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু তালেব, মোহাম্মদ ইয়াছিন উদ্দীন, রাইয়ান আহম্মেদ।

চাকসু নির্বাচনে পদ ও প্রার্থীর সংখ্যা : চাকসুর ২৬ পদে নির্বাচনের জন্য মোট ১৩টি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আংশিক প্যানেলে ৪১৫ প্রার্থী লড়াই করছেন। ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের নির্বাচনে মোট ৪৯৩ প্রার্থী মাঠে আছেন। ১৩টি প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহসাহিত্য সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহদপ্তর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহযোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ২০ জন এবং পাঁচ নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৮৫ জন। আর হল সংসদ নির্বাচনে ৯টি ছাত্র হলে ৩৫০ জন বিভিন্ন পদে লড়বেন। পাঁচটি ছাত্রী হলে বিভিন্ন পদে লড়বেন ১২৩ জন। শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে বিভিন্ন পদে লড়বেন ২০ জন প্রার্থী।

ভোটকেন্দ্র : বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, বাণিজ্য (বিবিএ) ও আইটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০ বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আইটি ভবনে ভোট দেবেন সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীরা। নতুন কলা ভবনে ভোট দেবেন শাহজালাল, এফ রহমান ও আলাওল হলের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবে শাহ আমানত ও মাস্টার দা সূর্য্য সেন হল শিক্ষার্থীরা। সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন নওয়াব ফয়েজুন্নেসা, শামসুন নাহার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অতীশ দীপঙ্কর হল শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্য অনুষদ (বিবিএ) ভবনে ভোট দেবেন প্রীতিলতা, বিজয় ২৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি দৃষ্টিহীনদের জন্য চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ কেন্দ্রে শুধু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা দুই নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। ভোটগ্রহণে ৭০০ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

যেভাবে ভোট দিতে হবে : শিক্ষার্থীদের মোট পাঁচটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। এ নির্বাচনের ভোট গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ১-৪ নম্বর ব্যালেট চাকসু এবং ৫ নম্বর ব্যালেট হল বা হোস্টেলের। গোপন কক্ষে নির্ধারিত কলম দিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পাশে সম্পূর্ণ বৃত্ত ভরাট করতে হবে। প্রতিটি পদের জন্য একটি করে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। চাকসুর নির্বাহী সদস্য পদে পাঁচটি, হল সংসদের জন্য তিনটি করে ভোট প্রদান করা যাবে। ভোটকক্ষে ১, ২, ৩, ৪ নম্বর লেখা এবং হলের নাম লেখা ব্যালট বাক্স থাকবে। ভোট সম্পন্ন করার পর নম্বর অনুযায়ী বক্সে ব্যালট পেপারগুলো ফেলতে হবে। সবমিলিয়ে একজন ভোটারকে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে ৪০টি ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে। তবে ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা : এ নির্বাচনের ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ভোট হবে ব্যালটে। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে যাব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যালট পেপার ছাপা হবে কমিশনের উপস্থিতিতে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে। নির্বাচনে ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের একটি নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড। যা ওএমআর মেশিনে শনাক্ত করা যাবে।’

ফলাফল প্রকাশ : বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে চলবে গণনার কাজ। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সংসদের ফল প্রকাশ করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে এবং হল সংসদের ফল ঘোষণা করা হবে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে। এদিকে চবি ক্যাম্পাস থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। সাড়ে ২৭ হাজার ভোটারের মধ্যে তিন চতুর্থাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করেন। আজ ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১১ বার চট্টগ্রাম নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করবে শাটল ট্রেন। এ ছাড়া চলাচল করবে ৩০টি বাস। প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট সপ্তম চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের জন্য ১২ অক্টোবর দিন ঠিক করা হলেও পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেটি পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়।

ভোটের দিনই ফলাফল চায় শিবির : নির্বাচনে অদৃশ্য প্রভাবের আশঙ্কা করছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ডাকসুর মতো চাকসু নির্বাচনেও ইঞ্জিনিয়ারিং কারচুপির আশঙ্কা করছেন তিনি। নির্বাচন শেষে আজই ফলাফল চান ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের (ইসলামী ছাত্রশিবিরি) ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি। এদিকে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে সহসাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন আনোয়ার হোসেন। মঙ্গলবার চাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্বের প্রত্যাশা সাবেক নেতাদের : চাকসু ও হল সংসদের সাবেক নেতারা শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। যারা জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তারা চান এমন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে চাকসুতে এমন নেতৃত্ব আসুক, যারা শিক্ষার্থীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে। সব দল মত পথের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা কাজ করবে তাদেরই শিক্ষার্থীরা বেছে নেবেন বলে মনে করেন তারা। ১৯৮৯ সালের ২৭ অক্টোবর চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের মজহারুল হক শাহ চৌধুরী। নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রশিবিরের জসিম উদ্দিন সরকার। মজহারুল হক পরবর্তীতে চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন জাসদ থেকে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন চাকসুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতি অনেক যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকসু হচ্ছে চবির ছাত্রছাত্রীর সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান। যারাই নির্বাচিত হয়ে আসুক তারা হয়তো কোনো না কোনো ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। কিন্তু তারা সব মতের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি দাওয়া নিয়ে কাজ করবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।

সূত্রঃ যুগান্তর

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৪:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
৫১১ Time View

উৎসবমুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৬ বছর পর চাকসুতে ভোটযুদ্ধ আজ

আপডেটের সময় : ০৪:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন আজ। দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর অপেক্ষার পর শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সচল হতে যাচ্ছে চাকসু। নির্বাচনে ১৩টি পূর্ণাঙ্গ, ২টি আংশিক প্যানেলে ৯০৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। টানা উনিশ দিন পর সোমবার রাতে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়। তবে মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্র্থীরা অনলাইনে প্রচারণায় মেতেছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন। নির্বাচন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এর আগে ১৯৯০ সালে হয়েছিল চাকসু নির্বাচন। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর বন্ধ ছিল। এদিকে নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫১৬ শিক্ষার্থী ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যেখানে ১৬ হাজার ১৮৯ ছাত্র ও ১১ হাজার ৩২৯ ছাত্রী ভোটার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ও প্রকৌশল অনুষদের ১৫টি কেন্দ্রে মোট ৬০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩০০টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ৭০০টি গোপন বুথ। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা ভোটকেন্দ্র রাখা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চবি প্রশাসনও অবাধ ভয়ভীতিহীন নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে। ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। মঙ্গলবার চাকসু ভবনের সামনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কোনো হুমকি নেই। শুধু বাইরে থেকে ইন্ধন না এলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যাবে।

ভিপি প্রার্থী : ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ইব্রাহীম হোসেন রনি, দ্রোহ পর্ষদের ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন মাহফুজুর রহমান, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ আব্দুর রহমান রবিন, বৈচিত্র্যের ঐক্যের ধ্রুব বড়ুয়া, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্যের তাওসিফ মুত্তাকী চৌধুরী, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের তামজিদ উদ্দিন, রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটির কেফায়েত উল্লাহ, স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন তানজীর রহমান আরাফাত, মুহাম্মদ ফয়সাল সিকদার, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. আজিজুল হক, আহসান হাবীব (কবি), মো. ইয়াছিন আরাফাত, মো. মাহফুজুর রহমান, মোহাম্মদ শহিদুল আলম রিফাত (এস এ রিফাত), রিজাউর রহমান, শুভ্র জ্যোতি মণ্ডল, সীমান্ত দত্ত কাব্য, হাবিবুর রহমান।

জিএস প্রার্থী : ছাত্রদলের মো. শাফায়েত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব, দ্রোহ পর্ষদের ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু, বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্যের চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের রশিদ দিনার, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ আব্দুর রহমান, বৈচিত্র্যের ঐক্যের সুদর্শন চাকমা, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের মুহাম্মদ ইয়াসিন উদ্দিন, সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্যের সাজ্জাদ হোসেন, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের সাকিব মাহমুদ রুমি, রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটির কাজী মো. শাহারিয়ার উল্ল্যাহ, স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন আবদুল্লাহ যায়েদ, আল যুবায়ের তুর্য, নূর মোহাম্মদ বাপ্পী, মিনহাজুর রহমান মির্জা, মুহাম্মদ খোরশেদ, মো. আরাফাত (জিহাদ আরাফাত), মো. ইলিয়াছ (সানি মুন্না), মো. রাহেনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু তালেব, মোহাম্মদ ইয়াছিন উদ্দীন, রাইয়ান আহম্মেদ।

চাকসু নির্বাচনে পদ ও প্রার্থীর সংখ্যা : চাকসুর ২৬ পদে নির্বাচনের জন্য মোট ১৩টি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আংশিক প্যানেলে ৪১৫ প্রার্থী লড়াই করছেন। ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের নির্বাচনে মোট ৪৯৩ প্রার্থী মাঠে আছেন। ১৩টি প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহসাহিত্য সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহদপ্তর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহযোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ২০ জন এবং পাঁচ নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৮৫ জন। আর হল সংসদ নির্বাচনে ৯টি ছাত্র হলে ৩৫০ জন বিভিন্ন পদে লড়বেন। পাঁচটি ছাত্রী হলে বিভিন্ন পদে লড়বেন ১২৩ জন। শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে বিভিন্ন পদে লড়বেন ২০ জন প্রার্থী।

ভোটকেন্দ্র : বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, বাণিজ্য (বিবিএ) ও আইটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০ বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আইটি ভবনে ভোট দেবেন সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীরা। নতুন কলা ভবনে ভোট দেবেন শাহজালাল, এফ রহমান ও আলাওল হলের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবে শাহ আমানত ও মাস্টার দা সূর্য্য সেন হল শিক্ষার্থীরা। সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন নওয়াব ফয়েজুন্নেসা, শামসুন নাহার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অতীশ দীপঙ্কর হল শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্য অনুষদ (বিবিএ) ভবনে ভোট দেবেন প্রীতিলতা, বিজয় ২৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি দৃষ্টিহীনদের জন্য চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ কেন্দ্রে শুধু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা দুই নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। ভোটগ্রহণে ৭০০ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

যেভাবে ভোট দিতে হবে : শিক্ষার্থীদের মোট পাঁচটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। এ নির্বাচনের ভোট গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ১-৪ নম্বর ব্যালেট চাকসু এবং ৫ নম্বর ব্যালেট হল বা হোস্টেলের। গোপন কক্ষে নির্ধারিত কলম দিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পাশে সম্পূর্ণ বৃত্ত ভরাট করতে হবে। প্রতিটি পদের জন্য একটি করে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। চাকসুর নির্বাহী সদস্য পদে পাঁচটি, হল সংসদের জন্য তিনটি করে ভোট প্রদান করা যাবে। ভোটকক্ষে ১, ২, ৩, ৪ নম্বর লেখা এবং হলের নাম লেখা ব্যালট বাক্স থাকবে। ভোট সম্পন্ন করার পর নম্বর অনুযায়ী বক্সে ব্যালট পেপারগুলো ফেলতে হবে। সবমিলিয়ে একজন ভোটারকে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে ৪০টি ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে। তবে ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা : এ নির্বাচনের ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ভোট হবে ব্যালটে। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে যাব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যালট পেপার ছাপা হবে কমিশনের উপস্থিতিতে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে। নির্বাচনে ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের একটি নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড। যা ওএমআর মেশিনে শনাক্ত করা যাবে।’

ফলাফল প্রকাশ : বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে চলবে গণনার কাজ। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সংসদের ফল প্রকাশ করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে এবং হল সংসদের ফল ঘোষণা করা হবে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে। এদিকে চবি ক্যাম্পাস থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। সাড়ে ২৭ হাজার ভোটারের মধ্যে তিন চতুর্থাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করেন। আজ ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১১ বার চট্টগ্রাম নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করবে শাটল ট্রেন। এ ছাড়া চলাচল করবে ৩০টি বাস। প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট সপ্তম চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের জন্য ১২ অক্টোবর দিন ঠিক করা হলেও পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেটি পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়।

ভোটের দিনই ফলাফল চায় শিবির : নির্বাচনে অদৃশ্য প্রভাবের আশঙ্কা করছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ডাকসুর মতো চাকসু নির্বাচনেও ইঞ্জিনিয়ারিং কারচুপির আশঙ্কা করছেন তিনি। নির্বাচন শেষে আজই ফলাফল চান ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের (ইসলামী ছাত্রশিবিরি) ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি। এদিকে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে সহসাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন আনোয়ার হোসেন। মঙ্গলবার চাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্বের প্রত্যাশা সাবেক নেতাদের : চাকসু ও হল সংসদের সাবেক নেতারা শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। যারা জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তারা চান এমন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে চাকসুতে এমন নেতৃত্ব আসুক, যারা শিক্ষার্থীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে। সব দল মত পথের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা কাজ করবে তাদেরই শিক্ষার্থীরা বেছে নেবেন বলে মনে করেন তারা। ১৯৮৯ সালের ২৭ অক্টোবর চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের মজহারুল হক শাহ চৌধুরী। নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রশিবিরের জসিম উদ্দিন সরকার। মজহারুল হক পরবর্তীতে চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন জাসদ থেকে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন চাকসুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতি অনেক যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকসু হচ্ছে চবির ছাত্রছাত্রীর সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান। যারাই নির্বাচিত হয়ে আসুক তারা হয়তো কোনো না কোনো ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। কিন্তু তারা সব মতের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি দাওয়া নিয়ে কাজ করবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।

সূত্রঃ যুগান্তর