Imam Hossain
উদ্যোক্তা শব্দটি মাথায় এলে প্রথমেই যে কল্পনাটি সাধারনত আমরা করে থাকি তা হল, বাধাহীন ক্যারিয়ার এবং অর্থ আয়। আর এটা স্বাভাবিক যে একজন উদ্যোক্তার কাজের ফলাফলটিই চোখে পড়ে এবং শুধুমাত্র কৃতকার্য হলেই সবাই তাকে বাহবা দেয়। কিন্তু ফারদিন ইসলামের সে পথটি পাড়ি দিয়ে আসা খুব সহজ ছিল না।
চাকুরীজীবী পরিবারের বিপরীতে বিজনেস নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ছিল ফারদিনের সর্বপ্রথম ধাপ। সিদ্ধান্তটি ছিল একান্তই তার নিজের। ঠিক তখন থেকেই পথ হাতড়ে পথের সন্ধানে নামে ফারদিন।
কিভাবে শুরু করা যায় সে চিন্তা-ভাবনার শুরু ২০১৪ সাল থেকে। প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেন, নিজেকে এবং নিজের জন্য স্কিল ডেভেলপ করার । কল্পনাকে ভিজুয়ালাইজ করার ইচ্ছাটি এ সিদ্ধান্তে দারুণ সহায়ক হয়েছিল তার। শুরু করেন ডিজাইনিংয়ে নিজের পাকা হাত গড়ার। ২০১৪ থেকে ইউটিউবের স্বল্প রিসোর্স দিয়েই হয় তার হাতেখড়ি। প্রতিনিয়ত শেখা এবং চর্চা তাকে অনেক সাহায্য করেছে। আস্তে আস্তে পেতে থাকেন ডিজাইনের কাজ। পরবর্তীতে আরও বেশ কিছু সেক্টরে স্কিল গড়ার কাজও চালিয়ে যান, সাথে নানাবিধ এক্সট্রা কারিকুলারেও একটিভলি কাজ করতে থাকে। নিজেকে স্কিল্ড করার এবং গড়ার এ যাত্রা ফারদিনকে সুযোগ করে দেয় দেশি-বিদেশি সংস্থার সাথে কাজ করার। সেখান থেকে অর্জন করেন কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্কিলের নানা সনদ।
ফারদিন উদ্যোক্তা হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যান যখন সিদ্ধান্ত নেন, নিজের প্যাশনকেই কিভাবে প্রফেশনে রুপ দেওয়া যায়। তাই নিজের স্কিল এবং আইডিয়া থেকেই কাজ শুরু করেন। আস্তে আস্তে পূর্ণ হতে শুরু করে কাজের ঝুলি। নিজের প্রতিষ্ঠান “Goodis – গুডিজ” এর মাধ্যমে সাপোর্ট দিতে শুরু করেন উদ্যোক্তাদের। ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং’র মাধ্যমে প্রফেশনাল লুক নিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার।
ফারদিনের কাছে তার পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “নিজে একজন উদ্যোক্তা হয়ে যেমন অন্যদের জন্য একটি সমাধান নিয়ে এসেছি, ঠিক তেমনি আমি একজন প্রবলেম সলভার হতে চাই – যেন কোন কাজে অভিযোগ না করে নিজের চেষ্টায়, সকলের সাহায্যে তা সমাধান করতে পারি”। কেউ উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরুর পরামর্শে ফারদিন বলেন, Observation, Communication & Solution এরপর কাজ শুরু করে দেওয়া। সেটিই পরবর্তী দিক নির্দেশনা দিয়ে দিবে এগিয়ে যাওয়ার।
বর্তমানে ফারদিন নিজ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যুক্ত আছেন কিশোর-কিশোরীদের সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কাজ করা তরুণ নেতৃত্বাধীন সামাজিক সংগঠন সাইবার টিনস’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে। স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার কাজ করতেও এটি অনেক অনুপ্রাণিত করেছে।
বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট বিগ-২০২৩ আসরে ফারদিন এ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঢাকা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাছাড়া ফারদিন অর্জন করেছে “Igniting Entrepreneurship Through Poster’s” টপ পারফরমার পুরস্কার এবং উপস্থিত হয়েছিলেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনেউরশিপ নেটওয়ার্ক – GEN BANGLADESH এর স্টার্ট-আপ হাডেলের প্রথম স্পিকার হিসেবে।
ফারদিনের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই। তিনি পড়াশোনা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ইনোভেশন এন্ড এন্ট্রাপ্রেনেউরশিপ বিভাগে। শুধুমাত্র কাজের স্বাধীনতার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নয়, বরং বেকারত্ব দূর এবং দেশের অর্থনীতিতে মূখ্য ভুমিকা রাখাই ফারদিন’র প্রধান উদ্দেশ্য।