আনোয়ারুল ইসলাম,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি।। সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে অবশেষে ঠাকুরগাও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ এমপি’র পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ও সমর্থন দিল রাণীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগ। শুক্রবার ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাণীশংকৈল উপজেলা আ’লীগ কার্যালয়ে উপজেলা আ’লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
উপজেলা আ’লীগ সভাপতি অধ্যাপক সইদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক এমপি ও জেলা আ’লীগের সহসভাপতি সেলিনা জাহান লিটা, উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহম্মেদ,সহ-সভাপতি এম এ মোমিন, অধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম, আবু শাহীন ও ইসাহাক আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ হোসেন বিপ্লব, ও গোলাম সারওয়ার বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান ও রেজাউল করিম, পৌর আ’লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক মহাদেব বসাক, ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আবু সুলতান, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল খালেক, ইউপি চেয়ারম্যান জিতেন্দ্রনাথ রায় ও শরৎ চন্দ্র রায়, আল্লামা ইকবাল, বিশ্বনাথ রায়, আ.লীগ নেতা আব্দুর রশিদ, অনিল চন্দ্র রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান ও কাউন্সিলর শেফাউল আলম শেফা, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, কৃষক লীগ সভাপতি বাবর আলী ও সাধারণ সম্পাদক দিগেন্দ্রনাথ রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক আরথান আলী, শ্রমিক লীগ সভাপতি আইয়ুব আলী, মহিলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ছাত্রলীগ নেতা মো: সাদিদ, মৎসজীবী লীগ সভাপতি মাহবুব আলম প্রমুখ।
এছাড়াও সভায় সাবেক উপজেলা আ’লীগ সম্পাদক আব্দুল কাদের, সাবেক পৌর মেয়র আলমগীর সরকার, সাবেক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নওরোজ কাওষার কানন, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাফুজা বেগম পুতুল, আ’লীগ নেতা অধ্যাপক প্রশান্ত বসাক, আ’লীগ নেত্রী তসদিকা হক প্রমুখ।
উপজেলা আ’লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, উপস্থিত নেতাকর্মীরা সবাই জাতীয় পার্টির প্রার্থির পক্ষে নির্বাচন করার সমর্থন দিয়েছেন। তাই আমরা সম্মিলিতভাবে তার পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সমর্থন দিচ্ছি।
জেলা আ’লীগ সহ সভাপতি ও সাবেক এমপি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের আসনে (ঠাকুরগাঁও-৩) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইমদাদুল হক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমরা আজকের মিটিংয়ে সকলের
ঐকমত্যের ভিত্তিতে দলীয় স্বার্থে জাতীয় পার্টির প্রার্থিকে সমর্থন দিয়েছি। সবাই তার পক্ষে নির্বাচন করার মত দিয়েছেন। উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদকে ছাড় দিয়ে নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি ইমদাদুল হককে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দলের বৃহৎ স্বার্থে আমাদের জাতীয় পার্টির নির্বাচন করতে হবে। একইভাবে পৌর মেয়রও জাপা প্রার্থির পক্ষে নির্বাচন করার মত ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত: স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও ২০০১ সালে হাত ছাড়া হয়। তখন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ আসনে এমপি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মদ। ২০১৪ সালে এ আসনটি চলে যায় ১৪ দলীয় শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলীর হাতে। ২০১৮ সালে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন জাহিদুর রহমান। ২০২২ সালে বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে উপ-নির্বাচনে এ আসনে আবার জাতীয় পাটির্র হাফিজউদ্দীন আহমেদ এমপি নির্বাচিত হন।
চলতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক এমপি ইমদাদুল হককে, জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমেদকে এবং ওয়ার্কাস পার্টি থেকে গোপাল চন্দ্র রায়কে। কিন্তু জোটগত কারণে শেষ মুহুর্তে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আ’লীগের প্রার্থী ইমদাদুল হককে প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ । নির্বাচনী লড়াইয়ের মাঠে বর্তমান আছেন হাফিজউদ্দীন আহমেদ, ওয়ার্কাস পার্টির গোপাল চন্দ্র রায়, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের খলিলুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আশা মনি।
আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হলেও তার পক্ষ সমর্থনে আ’ লীগ নেতাকর্মীের মাঝে তাৎক্ষণিক দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দেয়। কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে জাতীয় পার্টির পক্ষে এবং কেউ কেউ কেউ ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন জানান।
প্রসঙ্গত, এ আসনে জয় পরাজয় নির্ভর করে আ’ লীগের সমর্থনের উপর। আ’লীগ দলগত ভাবে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেয়ায় লাঙ্গলের জন্য জয় লাভ করা এখন অনেকটা সহজ হবে বলে মাঠ পর্যায়ে ভোটার ও সমর্থকরা মনে করেন।
এ আসনে দুটি পৌর সভা ও ১৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৮ জন। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।