নিয়মরক্ষার ম্যাচ বলে হালকা ভাবেনি ভারত। বরং মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল সূর্যকুমার যাদবের দল। ম্যাচের নায়ক অভিষেক শর্মা, যিনি মাত্র ৫৪ বলে ১৩৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন। ব্যাট হাতে শো চলার পর বল হাতেও রেখেছেন অবদান। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধসে দলের জয় সহজ করে দেন ভারতের বোলাররা।
এই ম্যাচ ছিল অভিষেক শর্মার জন্য বড় সুযোগ নিজেকে প্রমাণের। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইডেনে ৭৭ রান করলেও এরপর তিন ম্যাচে রান পাননি তিনি। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে তার ব্যাট থেকে ঝড় বেরিয়ে এলো।
শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন অভিষেক। ইংল্যান্ডের পেসারদের কোনো সুযোগ দেননি। মাত্র ১৭ বলে পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন, এরপরও চালিয়ে যান মারমুখী ব্যাটিং। একটা সময় মনে হচ্ছিল, রোহিত শর্মার ৩৫ বলে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড ভেঙে দেবেন তিনি। তবে কিছু বল নষ্ট করায় দুই বল দেরিতে, ৩৭ বলে শতরান পূর্ণ হয় তার।
শেষ পর্যন্ত ৫৪ বলে ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে আউট হন অভিষেক। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ১৩টি বিশাল ছক্কা। তার ব্যাটেই ভারত বিশাল স্কোরের ভিত গড়ে।
ভারতের ইনিংস বড় হতে পারত আরও, কিন্তু মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতায় ২৪৭ রানে থামে তারা। তিলক ভার্মা (২৪) ও শিবম দুবে (৩০) রান পেলেও হার্দিক পান্ডিয়া, রিঙ্কু সিং ও অক্ষর প্যাটেল ব্যর্থ হন।
অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের ফর্মও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র ২ রান করে ফিরেছেন তিনি। সঞ্জু স্যামসনের গল্পও একই—শর্ট বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ১৬ রানে ফেরেন তিনি।
বোলিংয়ে নজর কাড়লেন মোহাম্মদ শামি। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে বেন ডাকেটকে আউট করেন। পরে আদিল রশিদ ও মার্ক উডকে ফিরিয়ে নেন। ২.৫ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচে বড় ভূমিকা রাখেন অভিজ্ঞ এই পেসার।
২৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের ইনিংস প্রথম থেকেই ধুঁকতে থাকে। একমাত্র ফিল সল্ট (৫৫) কিছুটা লড়াই করলেও বাকিরা ছিলেন হতাশাজনক। ১০.৩ ওভারে মাত্র ৯৭ রানে অলআউট হয়ে যায় পুরো দল।
ভারতের স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী আবারও নিজের জাদু দেখালেন। ২ ওভারে ২৫ রান দিয়ে বাটলার ও লিভিংস্টোনকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধস নামান তিনি। পুরো সিরিজে ১৪ উইকেট নিয়ে তিনি গড়েছেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজের রেকর্ড।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন শিবম দুবে। ২ ওভারে ১১ রান দিয়ে ফিল সল্ট ও জেকব বেথেলকে আউট করেন তিনি।
শেষ ম্যাচে বিশাল জয় ভারতের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৫০ রানের ব্যবধানের জয় শুধু ইংল্যান্ডকে লজ্জাই দেয়নি, বরং ভারতের ব্যাটিং ও বোলিং শক্তিমত্তার দারুণ প্রদর্শনী ছিল এটি। অভিষেক শর্মার দুর্দান্ত ইনিংসের পাশাপাশি বোলারদের দাপটও ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই সিরিজ জয়ের মাধ্যমে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে বড় স্বস্তি আসবে। তবে মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ফর্ম এখনো চিন্তার কারণ। তার সমাধান না হলে বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।