চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট নিশ্চিতের ম্যাচে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। পুনেতে লাল-সবুজ দলের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত সূচনা করেন দুই টাইগার ওপেনার।
লিটন দাস-তানজিদ তামিমের ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পর তাওহীদ হৃদয়ের ৭৪ রানের ইনিংসের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই অজি ওপেনার ট্রেভিস হেড সাজঘরের পথ ধরেন। তবে মিচেল মার্শের বিধ্বংসী শতকে হেসেখেলে ৩২ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
৩০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ওভার দেখেশুনে খেলতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার ও হেড। তবে দলীয় ১২ রানে তাসকিন আহমেদের বলে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন হেড। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার দলের হাল ধরেন।
এই দুই টপ অর্ডার মিলে বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হয়। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ৫৮ রান তুলেন মার্শ-ওয়ার্নার। ইনিংসের ১৫তম ওভারেই মারকুটে ব্যাটিং দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের ১৯তম অর্ধশতক তুলে নেন মিচেল মার্শ। সেই সঙ্গে দলীয় শতরানও তুলে নেয় অজিরা।
১৯তম ওভারে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শতরান পূরণ করেন দুই ব্যাটার। তবে ২৩তম ওভারে টাইগার শিবিরে স্বস্তি এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৬১ বলে ৫৩ রান করে মিড অনে শান্তর কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ওয়ার্নার। দলীয় ১৩২ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে অজিদের। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের রানের চাকা সচল রাখেন মিচেল মার্শ ও স্টিভেন স্মিথ।
এই দুই ব্যাটার মিলে অজিদের জয়ের ভীত গড়ে দেন। এবারের বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন মিচেল মার্শ। এই ডানহাতি ব্যাটারের মারকুটে ব্যাটিংয়ে লড়াই করতে পারেনি টাইগার বোলাররা। স্মিথ-মার্শের ১৭৫ রানের জুটিতে ৩২ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয়ে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব শেষ করল অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে আজ ব্যাট হাতে ভালো সূচনা করেন দুই টাইগার ওপেনার। অজি বোলারদের দেখেশুনে খেলে দ্রুত স্কোরবোর্ডে রান তুলতে থাকেন লিটন দাস এবং তানজিদ তামিম। এ দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রথম দশ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ওঠে ৬২ রান।
আসরজুড়ে ব্যর্থ হওয়া ওপেনিং জুটি আজ ভরসা দেখাচ্ছিলো লাল-সবুজ দলকে। তবে দুর্দান্ত জুটি ভাঙে তামিমের বিদায়ে। দলীয় ৭৬ রানে শন অ্যাবটের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন এই ওপেনার। আউট হবার আগে ৩৪ বলে ৬ চারে ৩৪ রান করেন তিনি। টাইগার ওপেনার ফেরার পর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন নাজমুল শান্ত।
তামিমের সঙ্গে দুর্দান্ত ওপেনিং জুটির পর অধিনায়ক শান্তর সঙ্গেও ৩০ রানের জুটি গড়ে ওঠে লিটনের। তবে উইকেটে থিতু হয়েও আজ ইনিংস বড় করতে পারেননি টাইগার ওপেনার, ফলে ৩০ রানেই ভাঙে এ জুটি। অ্যাডাম জাম্পার বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মারনাস লাবুশেনের মুঠোবন্দী হন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৫ বলে ৫ চারে ৩৬ রান করেন তিনি।
লিটন ফেরার পর ক্রিজে আসেন হৃদয়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এ দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেন ৬৩ রান। দুজনের প্নচাশোর্ধ রানের জুটিতে বড় রানের আশা দেখছিল টাইগাররা। তবে বিপত্তি বাঁধে শান্তর দুর্ভাগ্যজনক বিদায়ে। ভালো ছন্দে থাকা শান্ত দৌড়ে রান নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হন। সাজঘরে ফেরার আগে ৬ চারে করেছেন ৪৫ রান।
শান্ত ফেরার পর ক্রিজে হৃদয়ের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অজি বোলারদের দেখেশুনে খেলে রিয়াদও আজ দুর্দান্ত শুরু করেন, স্কোরবোর্ডে রান তুলতে থাকেন দ্রুত ছন্দে। ফলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে টাইগারদের দলীয় সংগ্রহে যোগ হয় আরও ৪৪ রান। কিন্তু এরপরই শান্তর মত পরিণতি বরণ করতে হয় রিয়াদকেও। তিনিও রান আউটের শিকার হন। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ২৮ বলে ৩ ছয় এবং ১ চারে করেছেন ৩০ রান।
রিয়াদ ফেরার পর মাঠে আসেন মুশফিকুর রহিম। তবে মিস্টার ডিপেন্ডেবল আজ দলের হাল ধরতে পারেননি। সাজঘরে ফিরেন ২১ রান করে। মুশফিক ফেরার পর দলীয় ২৮৬ রানে ব্যক্তিগত ৭৪ রানে আউট হন হৃদয়ও। শেষ পর্যন্ত মেহেদী মিরাজের ২০ বলে ২৯ রানের ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অজিদের হয়ে আজ সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা এবং শন অ্যাবট।