মো .আহসানুল ইসলাম আমিন,স্টাফ রিপোর্টার : উৎপাদনের একমাত্র জীবন্ত উপকরণ হচ্ছে শ্রমিকের শ্রম। শ্রমকে পুঁজি করে ব্যবসা শুরু হয়েছে সভ্যতার শুরু থেকেই। বর্তমান শ্রমকে কেন্দ্র করে এ ব্যবসাকে আরও ঘৃণিত এবং কলঙ্কিত করেছে শিশু শ্রম। শিশু শ্রম বলতে বোঝায় কোনো শিশুকে জোরপূর্বক কাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য করা, যা তাদের মৌলিক চাহিদা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে। এ ছাড়াও শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে। শিশু শ্রম এক ধরনের শোষণের নাম। শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন অনৈতিক এবং বিপজ্জনক কাজে, যেমন- মাদক পাচার, যুদ্ধক্ষেত্রে সমরাস্ত্র বহন ও বিভিন্ন সমাজবহির্ভূত কাজে। যে বয়সে আনন্দ, কোলাহল, খেলাধুলা করার কথা সেই বয়সে শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বই খাতা নিয়ে স্কুলে গিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন না দেখে এই শিশুরা সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে দুবেলা দুমুঠো খাবারের স্বপ্ন দেখে। এসব শিশু শ্রমিকরা প্রতিদিন তাদের শ্রম দেয় বিভিন্ন কাজে কিন্তু ঠিকমতো মজুরি পায় না, খাদ্য পায় না, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে। দুরন্ত শৈশব কৈশোর হারিয়ে যায় বেঁচে থাকার তাগিদে।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইটভাটায় কাজ করছে ফারজানা । বয়স ১৪/১৩ বছর। পড়াশোনা করেছো কি’না জিজ্ঞেস করায় উত্তরে বলল: “ না ভাই, গরীবের আবার লেখাপড়া! দুই বছর মায়ের লগে ইট গোছানোর কাজ করি। এখন টেকা পাই কম, যখন বড় অমু মায়ের লাহান টাকা কামামু।” এই তো শিশু শ্রমিকের জীবন। শিক্ষা ও সচেতনতার গণ্ডি থেকে বঞ্চিত। আকজকের শিশু দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। আগামী দিনের উন্নয়নে আজকের শিশুদেরই প্রয়োজন হবে। একটি শিশুকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই শিশুর পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দিন দিন অব্যাহতভাবে শিশু শ্রম বেড়েই চলছে। বিভিন্ন কলকারখানা, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায়ই এখনও বেআইনিভাবে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হয়। শিশু শ্রম বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয়, জাতির ভবিষ্যৎ/শিশুদের হাতে ভিক্ষার থলে নয়, চাই বই ও কলম। এ কথাগুলো আজ শুধুই বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ। তারা আজ বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করেও প্রকৃত মজুরি থেকে বঞ্চিত। শিশুদের অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। অল্প বয়সেই অভাব-অনটনে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। যে বয়সে তাদের স্কুলে গিয়ে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা সে বয়স থেকে ধরতে হচ্ছে অভাবী সংসারের হাল।
বর্তমানে রাস্তা-ঘাটে, অলি-গলিতে শিশুদের ভারি কাজ করতে দেখা যায়। ইটের ভাটায় ইট নামানো, বাস-লেগুনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অল্প বয়সেই শিশুরা হেল্পারি করছে। গাড়িতে-লঞ্চে পণ্য উঠানো-নামানোর কাজও করছে শিশুরা। মাঝারি ভারি কারখানার মেশিনে কিংবা ওয়ার্কশপে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে শিশু শ্রমিকদের দেখা যায়। বিড়ি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত তামাক পাতার মধ্যেও কাজ করছে শিশুরা। বানাচ্ছে বিড়ি। এ কারণে শিশুদের দৈহিক গঠনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। কাজের লোক হিসেবে শিশুদের দিয়ে ভারি কাজ করানো হচ্ছে। অনেক বাবা-মা শিশুদের অর্থ উপার্জনের তাগিদে অন্যের বাসায় কাজ করতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে চলে শিশুদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। অন্যদিকে আইনে শিশু শ্রম নিষেধ থাকলেও জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ইট ভাটাগুলোতে চলছে শিশু শ্রম। ইট শুকানো, ভাটা পর্যন্ত পৌছানো পর্যন্ত সব ধরনের কাজ করছেন ৫-১০ বছরের শিশুরা।
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর, লতব্দী এবং বাসাইল ইউনিয়নের একাধিক ইট ভাটায় ফারুক, কবির, মিথিলা,ফারজানা, শান্তিসহ শতাধিক শিশু শ্রমিক দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে কাজ করছে। প্রতি বছর এই সময়ে তারা ইটভাটাগুলোর কাছের ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেন। তিন চার মাস তারা এখানে থাকবেন এবং বাবা মায়ের সাথে কাজও করবেন। প্রতিদিন ভাটার শুকানো ইট ঠেলা গাড়িতে তুলে চুল্লির কাছে পৌঁছে দিয়ে সারাদিনে ১ জন শিশু শ্রমিক আয় করেন ১০০টাকা। ফারুক নামের ৮ বছরের শিশু শ্রমিক জানান, সারাদিন বোঝা টানলে ২০০ টাকা পান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় ছোট বড় সব মিলিয়ে রয়েছে ৫৭টি ইট ভাটা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এসব ইটভাটার প্রতিটিতেই রয়েছে ১০ থেকে ১৫ জনের অধিক শিশু শ্রমিক। শিশু শ্রম নিরোধে আইনের প্রয়োগ ও জেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটির সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এসব ইটভাটায় শিশু শ্রম দিন দিন বেড়েই চলছে।
সরেজমিনে দেখাযায়, ইট বিছানো, সাজানো, ঠেলা গাড়িতে অথবা মাথায় করে চুল্লিতে পৌঁছানো, পোড়া ইট মাথায় বহন করে এক স্থানে মজুদ করার কাজ করছে শিশুরা। অথচ এসব কাজ শিশুদের দিয়ে করানো নিষিদ্ধ। ছেলে শিশু শ্রমিকের পাশাপাশি মেয়ে শিশু শ্রমিকও কাজ করছে। এমনি এক মেয়ে শিশু শ্রমিক শান্তি (৮) কে দেখা গেলো ৫টি কাচা ইট মাথায় করে এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। কথা বলে জানা যায়, তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, মায়ের সাথে পেটের দায়ে ইট ভাটায় কাজ করতে হচ্ছে তাকে, ধুলো-বালি ময়লায় সারাদিন কষ্ট হলেও কাজ করতে হয় তাকে।
আরেক শিশুশ্রমিক মিথিলা জানায়, তার বাবা আলামিন এবং মা কুলসুম ভাটার চুল্লিতে কাজ করে, গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। বাড়ীতে একা ভালো লাগবেনা তাই সে চলে আসছে। শান্তি, ফারুক, মিথিলার বাবা-মায়েরা ইট ভাটার মালিক থেকে দাদন নিয়েছে সেই টাকা পরিশোধে তারা পিতামাতাকে সাহায্য করছে। এবিষয়ে একাধিক ভাটার মালিক দাদনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানায়, ‘দরিদ্র শিশুদের বাবা মায়ের অনুরোধেই কাজে রাখা হচ্ছে, কাউকে জোর করার অভিযোগ পাবেন না। শিশুরা তাদের বাবা মাকে সাহায্য করে এটা তাদের বিষয়। শিশুদের দিয়ে কোন কাজ মালিকপক্ষ করায় না।’
জানাগেছে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দ্বিগুণ। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে গৃহপরিচারিকার কাজে নিয়োজিত ৮৬ শতাংশ মেয়ে। ৩০ শতাংশের বয়স ছয় থেকে ১১ বছর আর বাকিদের বয়স ১২ থেকে ১৬ পর্যন্ত। তারা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে থাকে। শিশু শ্রমিকরা কাজে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় দিলেও সে অনুযায়ী তারা শ্রমের দাম পায় না। কাজের চাপ ও নানা কারণে তারা ঠিকমতো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে না। এসব শিশুর সামান্যতম ভুল হলেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও হাত তোলে এসব অসহায় শিশুশ্রমজীবীর কোমল শরীরে।
ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘শিশুরা তাদের পিতামাতাকে দেখে কাজ শিখে। তারা জানে বড় হয়ে তাদের এই কাজই করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশু শ্রম আইনে নিষিদ্ধ কখনও শিশু শ্রমকে সমর্থন করিনা। আমার জানামতে কোন ভাটায় শিশু শ্রমিক নেই। যারা আছে তারা বাবা মায়ের সাথে এসেছে। কল-কারখানা অধিদপ্তর থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে কোন শিশু শ্রম মেনে নেয়া হবেনা। শিশু শ্রমের বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
জেলার পরিবহন সেক্টরসহ প্রায় সব কাজেই অবাধে চলছে শিশুশ্রমের অবৈধ ব্যবহার। আইন ভঙ্গ করে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার একটা বড় কারণ, শিশু শ্রমিকদের মুজুরি কম দিতে হয়। এ কারণে শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে ঝুঁকির সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৈষম্যের বিষয়টিও রয়েছে। একজন শিশু শ্রমিক দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা পায়। সেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক দিন শেষে ৫০০-৬০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। শিশুরা অল্প বয়সেই শ্রমিক হয়ে যাওয়ার কারণ পরিবারের সীমাহীন দারিদ্র্য। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে শৈশব ও কৈশোর পেরোনোর আগেই অর্থ উপার্জনে নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা। অথচ তাদের এই বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা, নয়তো মাঠে খেলার কথা। সে রকম জীবন অনেকটা কল্পনার মতো শোনায় এখন তাদের কাছে। অভাব-অনটনের সংসারে তাদের ভূমিকা রাখতে হচ্ছে পরিবারের ব্যয়ভার মেটাতে। এজন্য তারা অল্প কিছু টাকার জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ ও ভারী কাজে নেমে পড়ছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড ও গ্যারেজ ঘুরে দেখা যায় সেখানে শিশু শ্রমিকের পাশাপাশি কিশোর শ্রমিক রয়েছে যথেষ্ট। লেগুনা ও পিকআপগুলোর অধিকাংশ হেলপারই শিশু ও কিশোর। এছাড়া গাড়ি ও মোটরসাইকেলের গ্যারেজে শিশু শ্রমিকের আধিক্য বেশী রয়েছে। এছাড়া প্রায় হোটেল-রেস্তোয় অনেক বেশী শিশু শ্রম রয়েছে। এই শিশু শ্রম নিবারণে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই।
শিশু ও কিশোর শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পরিবারে অর্থাভাবের জন্য তার মা-বাবা তাদের এই পেশায় পঠিয়েছেন। প্রথম প্রথম কাজ করতে খারাপ লাগত। কিন্তু এখন তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। শিশু শ্রমিকদের অধিকাংশই বিভিন্ন শাস্তি ও নির্যাতনের কথাও জানিয়েছে। কাজে কোনো রকম হেরফের হলেই চড়-থাপ্পড় ও গালাগাল সহ্য করতে হয় তাদের। নির্ধারিত মজুরির চেয়েও কম মুজুরি ও সময়মতো মুজুরি না দেয়ারও অভিযোগ জানিয়েছে তারা। এদিকে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরও দেশে প্রতি ছয় জন শ্রমিকের একজন শিশু। শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ২৫ শতাংশই করে শিশুরা। বাসাবাড়িতে যারা কাজ করে তাদের ৩৭ শতাংশও শিশু। এই শিশুদের বেশির ভাগেরই বয়স পাঁচ থেকে ১৪ বছর। বাসাবাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, টেম্পু হেলপার, ময়লা ফেলার কাজ, মাদক ও অস্ত্র আনা নেওয়া করা, ইটভাটার কাজ, জাহাজ ও পাথর ভাঙা লেদ মেশিন কারখানায় ও ওয়েল্ডিং কারখানায় ঝালাই এর কাজসহ নানা ধরনের কাজে যুক্ত শিশুরা। আর কর্মক্ষেত্রে শিশুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বলতে গেলে অহরহ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জেলা সদরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করে ৯ বছরের শিহাব। দেড় বছর আগে সে চাচার হাত ধরে মুন্সীগঞ্জ আসে। তারপর থেকে ওয়েল্ডিং কারাখানায় ঝালাইয়ের কাজ করছে। শিহাব বলেন, ‘সবসময় কাজ করতে ভালো লাগে না। কিন্তু কাজে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। আবার এমন হইছে, শরীরে অনেক জ্বর কিন্তু এরপরও কাজে আসতে হইছে।’
অন্যদিকে পঞ্চসার ইউনিয়নের দুর্গাবাড়ি এলাকার প্লাস্টিক কারখানাগুলোতে চলছে শিশুশ্রম। কারখানাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে স্বল্প বেতনের পারিশ্রমিকে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করে একদিকে যেমন মজুরি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালাচ্ছেন প্লাস্টিক কারখানা। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্লাস্টিক কারখানাগুলোর নেই লাইসেন্সের মেয়াদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্র।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিশু শ্রম বন্ধে সরকারের তরফ থেকে নানা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পঞ্চসারের দুর্গাবারি, ইফাদ ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ, বিসমিল্লাহ প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রিজ ছাড়াও বেঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক প্লাস্টিক কারখানায় প্রশাসনিক তৎপরতার কোনও প্রতিফলন ঘটেনি।
দুর্গাবাড়ি এলাকায় নাম ঠিকানা বিহীন প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করে ৩ জন শিশু। আকশ( ১১), ওসমান গনি(১০) ও পাপ্পু( ১০)। সকলেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অধ্যয়নরত অবস্থায় কাজে ঢুকেছে। তাদের সাথে কথা বলে জানাযায় পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য বাধ্য হয়ে তাদের কাজে ঢুকতে হয়েছে । মহাজনদের অর্থের লোভে পড়ে অভিবাবকরাও শিশুদের কাজে পাঠাচ্ছেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের বিনিময়ে সামান্য মজুরি পাচ্ছে এই শিশুরা। একদিকে অক্লান্ত পরিশ্রম, অন্যদিকে সামান্য ভুলের কারণে তাদের নির্মম-নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ কাজে প্রত্যেককে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই টাকার অর্ধেক অগ্রিম তাদের অভিবাবকের হাতে দিয়ে তাদের আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশু শ্রম বিষয়টাই এক ধরনের নির্যাতন। তাই প্রথমত শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। যতক্ষণ না শিশুকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মালিক পক্ষ এবং শিশুকে কাজে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের আইনের আওতায় আনা যাবে ততক্ষণ শিশু শ্রম বন্ধ হবে না।
মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ কাদের চৌধুরী বলেন, সরকার ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রত্যাহারের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ২৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে শতভাগ শিশুশ্রম মুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের দেশের শিশুদের লেখাপড়া, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া শিশু শ্রম বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই শিশু শ্রম বন্ধে তাদের শিক্ষার বাধ্যকতা করতে হবে। এ লক্ষ্যে শিশু শ্রমের কুফল সম্পর্কে শিশুর অভিভাবকসহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তুলতে হবে। তবে দারিদ্র্য, ক্ষুধা থাকলে কোনোভাবেই শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাই সুনাগরিক গড়ার স্বার্থে শিশুশ্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করলেই এ সামাজিক সমস্যার সমাধান আসবে।