বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচন থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে। মানুষের ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। আগের থেকে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে; তাই কেউ যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে একজন নেতা হিসেবে তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসা আপনার দায়িত্ব।
সব নেতাদের ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেছেন, জনগণকে সাথে রাখুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন।
সোমবার খুলনা প্রেস ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে দিনব্যাপী বিভাগীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির সমাপনী বক্তৃতায় বিকালে তিনি এসব কথা বলেন।
‘রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি প্রদত্ত ৩১ দফা’ বিষয়ে খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সহস্রাধিক নেতা এ প্রশিক্ষক কর্মশালায় অংশ নেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যামিলি কার্ড এবং কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড তৈরি করব। ফ্যামিলি কার্ডটি হবে পরিবারের মা বা স্ত্রীর নামে। এতে তার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বাড়বে। একই সঙ্গে কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড করা হবে; যা প্রতি মৌসুমে কৃষকের সার-বীজ বা আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবে।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমরা ক্ষমতায় যায়নি, যাব কিনা জানি না। তখনই ক্ষমতায় যেতে পারব, যখন জনগণের সমর্থন পাব। নেতাকর্মীদের সব কর্মকাণ্ড হচ্ছে বিএনপির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে এমন হতে হবে, যাতে জনগণ আপনার সঙ্গে থাকে, বিএনপির সঙ্গে থাকে। দলকে রক্ষা করা, সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সবার। আপনাকে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। বাংলাদেশের জনগণের আস্থা বিএনপির ওপর আছে। এটি ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার এবং আমাদের সবার।
তারেক রহমান বলেন, দেশ সব মানুষের জন্য। গত কিছুদিন সমাজের কিছু ব্যক্তি সংস্কারের কথা বলছে। গত ৫ মাস আগেও তারা বলেনি; কিন্তু বিএনপি দুই বছর আগে থেকেই বলছে। বিএনপি দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। ৩১ দফা তারই প্রমাণ। গত ৩-৪ মাস সংস্কারের যে কথা বলছে, তার সবকিছুই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। এই ৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক সব দলের।
তিনি বলেন, ৩১ দফা সফল করতে যেকোনো মূল্যে জনগণের সমর্থন রাখতে হবে। দলের পক্ষে পরিকল্পনা নিতে হবে। কিভাবে জনগণকে পাশে রাখবেন- সব কিছুর লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সমর্থন আমাদের পক্ষে রাখা। একই সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনা যাতে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, ৩১ দফার সব কিছু জনগণের মাঝে নিয়ে যেতে হবে। জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের প্রতি জনগণের আস্থা যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ১৭ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপনারা সংগ্রাম করে যেভাবে টিকে ছিলেন, তার থেকে সহজ হবে এ কাজটা জনগণের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এত কঠিন পথ যদি আপনারা পাড়ি দিয়ে আসতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে একটু কষ্ট করলেই ৩১ দফা আমরা জনগণের মাঝে নিয়ে যেতে পারি। এ কাজ আপনারা খুব সহজে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে সক্ষম হবেন।
তারেক রহমান বলেন, নারীর যোগ্যতা ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। এটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা উচিত। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে নারীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ফ্রি করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করব। প্রান্তিক মানুষকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিনিমাম সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। এটি সব শ্রেণি পেশার মানুষ পাবে। ফ্যামিলি কার্ডটি পরিবারের মা বা স্ত্রীর নামে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তার মর্যাদা বাড়বে। আর যে অর্থ সাশ্রয় করবে সেই অর্থ সন্তানের স্বাস্থ্য ও লেখাপড়ায় ব্যয় করবে। এতে ভবিষ্যৎ সুন্দর একটি প্রজন্ম তৈরি হবে। সঞ্চিত অর্থ ৫ থেকে ১০ বছর পর তার অর্থনৈতিক শক্তি সৃষ্টি হবে। এতে পরিবারে তার আত্মমর্যাদা বাড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ, নদী ও খাল খনন করতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায়ও এগিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া তিনি ৩১ দফার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন নেতাকর্মীদের কাছে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য। বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য নয়। দেশের সম্পদ কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি আমরা চেষ্টা করব।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূল প্রশিক্ষক ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব মো. শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ।
বিভাগীয় এ কর্মশালায় খুলনা অঞ্চলের ১০টি জেলা ও একটি মহানগরের ১১টি ইউনিট বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দিনভর স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সমাপনী পর্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য শুনে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নেতারা।