শিল্প প্রতিষ্ঠান হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত ব্যবসায়ী আদম তমিজী হককে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।
শনিবার সন্ধ্যায় তার গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আদম তমিজীকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে আদম তমিজি হককে আটক করতে গত ১৭ নভেম্বর র্যাবের একটি টিম গুলশান-২ নম্বরে ১১১ নম্বর রোডে তার চারতলা বাড়ি ঘিরে ফেলে। কিন্তু তিনি বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে র্যাবের কাছে আত্মহত্যার হুমকি দেন। এরপরই র্যাবের টিম তাকে আটক না করেই ফিরে যায়।
আদম তমিজি হক ঢাকা মহানগর উত্তর তাঁতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। পরে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ এবং দলীয় শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আদম তমিজি হকের বাড়ির চারদিকে ডিবির একটি টিম অবস্থান নেয়। ওই সময় আদম তমিজি হক গাড়িতে করে বাড়িতে প্রবেশ করার সময় ডিবির টিম তাকে আটক করে। এরপর ডিবির একটি গাড়িতে করে মিন্টোর রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
গত ১৩ নভেম্বর রাতে দেশে ফেরেন আদম তমিজী হক। তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক। পরে গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর রাতে আদম তমিজী হকের বাসায় যান র্যাব সদস্যরা।
ডিবি সূত্র জানায়, দেশের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলা, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্যসহ বেশকিছু অভিযোগ আছে আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে। এজন্য জিজ্ঞাসাবদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা হয়। আনিছুর রহমান নাঈম নামে এক ব্যক্তি এ মামলা করেন। যা ১৫ নভেম্বর এজাহারভুক্ত হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আদম তমিজী হক ইচ্ছাকৃতভাবে তার কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর, মানহানিকর, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
অন্যদিকে, সাইরা সিদ্দিকী তানহার এক মামলায় ঢাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে একটি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করেছেন। যার কপি গুলশান থানায় পৌঁছেছে।
এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তমিজী হক ফেসবুকে ঘোষণা দেন, গাজীপুরের একজন প্রতিমন্ত্রী তার ব্যবসা বাজেয়াপ্ত করার চেষ্টা করছেন। তাকে তার ব্যবসার সুরক্ষার জন্য বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য করছেন। তারপরে তিনি ফেসবুক লাইভে তার পাসপোর্ট পুড়িয়ে দেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।
পরে তাকে তার দলীয় পদ থেকে দ্রুত অব্যাহতি দেয়া হয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ তাকে বরখাস্ত করে। অবশ্য পরে নিজের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলার কারণে ক্ষমা চেয়ে তমিজী হক বলেন, অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কাজ করেছেন, যা একদমই উচিত হয়নি। তিনি বাংলাদেশকে অনেক ভালোবাসেন।