চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নিজ কার্যালয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। এমনকি তার অফিসও ভাংচুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার মাথায় সাতটি সেলাই লেগেছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবুল হায়াতের উপস্থিতিতে এ হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেডর্ক ভোরের পাতার হাতে সংরক্ষিত আছে। সাব রেজিস্ট্রার অফিসের প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্র দাবি করেছে, ইউএনও আবুল হায়াত অনাকাঙ্খিত ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল।
তবে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়েছে আবুল হায়াতের। বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে প্রায় ৮ মিনিটের কথোপকথনের সময় তিনি বলেন, বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মারামারি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে দুপুর দেড়টার দিকে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর অফিসে যান। একটা মানবিক বিষয় (প্রতিবন্ধী মেয়ের জমির রেজিস্ট্রি) নিয়ে গত ছয় মাস ধরে সুপারিশ করার পরও সাব রেজিস্ট্রার সেটি করে দেননি বলেই সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর বিরক্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে লিখিত ব্যবস্থা নিবেন বলেও চলে আসেন।
উল্লেখ্য, সাব রেজিস্ট্রিার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন। চড় থাপ্পড় থেকে শুরু করে এখনই মেরে ফেলা হবে এমন কথাও বলা হয়। কথায় কথায় পিটাবো বলেও টাকা খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দলিল লেখক টাকা নিয়েছে কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার কোনো টাকা নেননি। তারপরও ইউএনও এবং তার গুন্ডা বাহিনীর লোকজন সেখানে মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।
এরপর বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে মঙ্গলবার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ঢুকে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছেন শিবগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। এই হামলার ইন্ধনদাতা হিসাবে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতকে দায়ী করেন। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে আমি তো আইনের বাইরে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে পারি না। উনি আমাকে মানবিকভাবে অবশ্যই অনুরোধ করতে পারেন, কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হয়ে আরেকজন কর্মকর্তাকে কেন হুমকি দিলেন? এ ঘটনার জন্য পুরোপুরি দায়ী ইউএনও আবুল হায়াত। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিভাগীয় বিচার চাই, যোগ করেন শিবগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী।
এদিকে, ইউএনও আবুল হায়াতের নির্দেশে মারামারি ও ভাংচুরের কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে শিবগঞ্জ থানার পুলিশ উপস্থিত হয় বলেও জানিয়েছেন নিজেই। শিবগঞ্জ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জুবায়ের আহমেদ জানান, সেখানে দলিল লেখক, নকল নবিশ ও জমি সংক্রান্ত কাজে আসা সাধারণ মানুষ ছিল। কে বা কারা তার উপর অতর্কিত হামলা করেছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস কক্ষও ভাঙচুর করা হয়।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তারা আহত অবস্থায় ইউসুফ আলীকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সে সময় তাদের সাথে পুলিশ সদস্যরাও ছিল। এখনও এজাহার পাওয়া যায়নি। পেলে ঘটনাটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
তবে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সাব রেজিস্ট্রার আফসানা বেগমকে ফোন করা হলেও তিনি ওই ঘটনার বিস্তারিত জানেন দাবি করেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকায় পরবর্তীতে কথা বলবেন বলেও জানান।