বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি পৃথক আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে এই ইস্যুতে বৈশ্বিক নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
নিজ বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো জরুরিভাবে প্রয়োজন। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নিজের এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি এটি সংকটের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়।’
‘৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তার দেখানো পথে বাস্তবমুখী নীতিগ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি।
তিনি বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজি অর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সংকট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলোকে বহুগুণে জটিল করেছে। সে কারণে এই বছর জাতিসংঘ এসডিজি সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক ঘোষণা ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে।