আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী):-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র্যাংকিং ২০১৮-এর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। টানা চতুর্থবারের মতো আবারও দেশসেরা উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী কলেজ। ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশ সেরা হওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় চলেছে এই বিদ্যাপিঠ।
১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজের পর রাজশাহী কলেজ দেশের তৃতীয় প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ৬৮৫টি কলেজের ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের সেরা কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশে এই কলেজ থেকেই সর্ব প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করা শুরু হয়।
রাজশাহী কলেজের সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন সাবেক অধ্যক্ষ মোহা. হবিবুর রহমান। তার নেতৃত্বেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেও টানা চারবার দেশসেরা হয়েছে। তাকে বলা হয় আধুনিক রাজশাহী কলেজের রূপকার।
তিনি ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৮টি সূচকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার সেরা হয়েছে রাজশাহী কলেজ, পেয়েছে মডেল কলেজের খেতাব।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, রাজশাহী কলেজের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. হবিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে।
রাজশাহী কলেজকে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সর্ম্পককে সুদৃঢ় করেছেন। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। পুরো ক্যাস্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে সাজিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের প্রয়োজনগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীদের মনোজগতের ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলাবোধ শিখিয়েছেন। ক্লাস রুমের ভেতর থেকে বাইরে সবকিছুর সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন।
শিক্ষকদের আন্তরিকভাবে পাঠদানে উৎসাহিত করেছেন। আর এসব কারণেই রাজশাহী কলেজ শ্রেষ্ঠ ও মডেল বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে সেরা রাজশাহী কলেজ
রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আলী বলেন, কলেজের পরিবেশ, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখানোর যে প্রেষণা সেটা হয়তো অন্য কলেজগুলোর চেয়ে ভিন্ন।
এ কারণেই আমাদের কলেজ স্বাতন্ত্র একটি জায়গা পেয়েছে। আর এক্ষেত্রে রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহা. হবিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দক্ষতা প্রশংসনীয়ই শুধু নয়, অনুকরণীয়।
প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজশাহী কলেজের শিক্ষকরা সবসময় চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে পাঠদান করতে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো সহজেই শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে।
এছাড়া কলেজ প্রশাসনও অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে। পড়াশোনার বাইরে বুদ্ধিভিত্তিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণেও তৎপরতা প্রচুর। সর্বোপরি একজন শিক্ষার্থীকে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করা হয়। এ কারণেই জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার এই গৌরব।
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. হবিবুর রহমান বলেন, যে কোনও কাজের প্রতি ভালোবাসা, একাগ্রতা, সততা ও স্বচ্ছতা থাকতে হয়। আমি সেটা করার চেষ্টা করেছি। রাজশাহী কলেজের সার্বিক উন্নতির জাদু সর্ম্পকে অনেকেই জানতে চান।
এক কথায় বলতে গেলে, আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ইতিবাচকভাবে বদলে যেতে দেখেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিয়েছি, প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছি। যা অনেক প্রতিষ্ঠানই পারেনি।
রাজশাহী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, রাজশাহী কলেজ সব সময় শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। আজকের এই সাফল্যের পেছনে সাবেক অধ্যক্ষের বড় ভূমিকা রয়েছে। সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সাফল্যের মাত্রাকে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে কাজ চলছে।
শিক্ষার্থীদের মেধার উৎকর্ষতা সাধনে দক্ষ শিক্ষকদের মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে। রাজশাহী কলেজের এই সাফল্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শুভাকাঙ্খী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ইতিবাচক প্রচেষ্টা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৮৭৩ সালে ৩৫ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এখানে ২৪টি বিভাগে প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থী আর শিক্ষক রয়েছেন ২৫৭ জন।