Imam Hossain
ফ্রান্সিস বেকনের মতে “জ্ঞানই শক্তি।” সেই উক্তির আলোকে বললে, জ্ঞান তখনই শক্তিতে রুপান্তরিত হয়, যখন কাজের মাধ্যমেে জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটে। নিজের অর্জিত জ্ঞানকে সবার নিকট ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন এমনই এক তরুণ রাকিব শাহরিয়ার রিমেন।
ঢাকার আলো বাতাসে বেড়ে উঠা চঞ্চল প্রকৃতির রিমেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। ষষ্ঠ শ্রেণি শেষে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ ভর্তিযুদ্ধে সফল হয়ে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুযোগ পান।
সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহুর্তগুলো কাটিয়েছেন ক্যাডেট কলেজে। সাক্ষাৎকারের সময় বলে উঠেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন ক্যাডেট। জীবনের সবটা জুড়ে ক্যাডেট কলেজের শিক্ষা এবং আদর্শকে ধারণ করা রিমেন পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিউপি) থেকে নিজের বিবিএ জেনারেলে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালাকালে রিমেন “পিওরা” এবং “ওজন” নামে দু’টো স্টার্টআপ শুরু করেন।
নারীদের কিভাবে পিরিয়ড পেইন থেকে রিলিফ রাখা যায় সেটার ওপর ভিত্তি করে কাজ করে যাচ্ছে পিওরা এবং কার্বনডাইঅক্সাইড যখন দিনে দিনে পৃথিবীতে জ্যামিতিক হারে বাড়তেছে ঠিক তখনই রিমেন এবং তার টিম “ওজন” কিভাবে কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে আনা যায় সেটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রিমেন শুধু নিজের স্টার্টআপ গুলোতে সময় দিয়েছেন এমন নয়,পাশাপাশি কাজ করেছেন দেশের প্রথম অনলাইন ফার্মা “Ipharma”, “রেডিও ফূর্তি”, “SME Vai” সহ নানা স্টার্টআপের সাথে।বিবিএর শেষের দিকে BAT এর সাথে এইচআর ইন্টার্ণ হিসেবে রয়েছে কাজের অভিজ্ঞতা।
বর্তমানে “এডভাইভ”- র প্রোডাক্ট এন্ড গ্রোথ স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কর্মরত আছে। এছাড়াও পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং সেভাবে পরিচিত না হওয়ায় সেটাকে সবার মাঝে পরিচিত করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
প্রফেশনাল কাজ কর্মের সফল হওয়ার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও রিমেন ছিলেন পটু। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় বিউপি হিউম্যান রিসোর্স এন্ড লিডারশীপ ক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন, ২০২২ সালে ইউনাইটেড নেশনস একাডেমিক ইম্প্যাক্টে মিলেনিয়াম ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
অর্জনের শুরুটা ছোট বেলা থেকে হলেও তার ক্যাডেট জীবনে ২০১৩ সালে ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় ইন্টার হাউস ক্রিয়েটিভ কালচারাল কম্পিটিশনে প্রথমবার বেস্ট পারফর্মার হিসেবে মনোনিত হয়েছিলেন। সাফল্যের যাত্রায় ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে ইন্টার হাউস ফুটবল কম্পিটিশনে বেস্ট স্কোরার হওয়াও যোগ হয়েছে । এছাড়া ২০১৭ সালে ইন্টার ক্যাডেট কলেজ ফুটবল মিটে সেকেন্ড রানার আপ হয়েছিলো তার দল। সেবারই জেনারেল নলেজ এবং ন্যাশনাল ডিবেট ফেস্টে ১ম স্থান অধিকার করেছিলেন।
কাজ এবং কম্পিটিশনে ভালো করায় জিতেছেন অসংখ্য এওয়ার্ড এবং রিকগনেশন। ২০২০ সালে ব্যাসিস ন্যাশনাল আইসিটি এওয়ার্ড পাওয়া ছিলো অন্যতম। সেবার নাসা স্পেস এ্যাপস চ্যালেঞ্জে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হয়ে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মনোনয়ন। একই প্রতিযোগিতায় ২০১৯ সালেও জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়েছেন এবং পেয়েছেন গ্লোবাল মেনশন।
২০২২ সালে বিইউপি এইচআরএলসি আয়োজিত ” হাউজ অব ভেঞ্চার”, এআইইউবি গ্রীন প্ল্যানেট ক্লাব আয়োজিত “ক্লাইমেট এক্সিবিশন” এবং ডব্লিউইউ ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ফিন্যান্স ক্লাব আয়োজিত “দ্যা পিচার্স” চ্যাম্পিয়ন হওয়া গৌরব অর্জন করেছিলেন। একই বছর আইসিটি ডিভিশনের স্টুডেন্ট স্টার্টআপ কম্পিটিশনে হয়েছেন রানার্স আপ।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে ” Moonshot Award ” এর সেরা ১০০ তে নমিনেশন পেয়েছেন এবং হয়েছেন ফাইনালিস্ট। “She love Tech” এবং “ক্লাইমেট লঞ্চপ্যাডে” রানারআপ হওয়ার কীর্তি রয়েছে প্রতিভাবান এই তরুনের।
নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে রিমেন জানান, “আমি প্রতিনিয়ত শিখতে পছন্দ করি,আমার অর্জিত শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা আমি চাই এদেশের লক্ষ লক্ষ তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের জীবনে সামান্য হলেও অবদান রাখতে।এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। “