বিশেষ প্রতিনিধি।। মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করে দেওয়ার ব্রত নিয়েই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন এম এ মালেক। সেই শৈশব থেকেই এ পথে তার বিচরণ। সক্রিয় রাজনীতিতে তখন যুক্ত না হলেও সামাজিক নানা উদ্যোগে ছিলেন সামনের কাতারে। অসাধারণ নেতৃত্ব গুণে তরুণ বয়সেই বনে গেছে তরুণদের নেতা। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছন তরুণদের সচেতনতা বৃদ্ধি আর তাদের উন্নয়নের জন্য। সেই যে ছুটে চলা শুরু হয়েছে এখনও থামেনি। মধ্য বয়স শেষে এখনও তিনি অটল মানব সেবায়। বিশ্বের নানা দেশে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক মুক্তির জন্য নিরবধি কাজ করে যাচ্ছেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও যুক্তরাজ্য বিএনপির এম এ মালিক।
পারিবারিকভাবেও সমৃদ্ধ এম এ মালিকের পরিবার। সিলেটের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তার বাবা আলহাজ খনু মিয়া ছিলেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৬ সালে তরুণদের নিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় সংগঠন তরুণ সংঘের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এম এ মালিক। ৭৬ -এ এ সংঘঠটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। সে সময়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সিলেট সফরে যান। জিয়াকে দেখার জন্য তিনি উদ্গ্রীব হয়ে পড়েন। তার ভাষ্যমতে, স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি সিলেট আসছেন। এ খবর আমাদের জন্য আনন্দের। আমরা তাকে দেখার জন্য এক ধরণের আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। তার আগমনকে কেন্দ্র করে আমি তরুণ সংঘের ৫-৭ হাজার তরুণকে ট্রাকে করে বিমান বন্দরে গিয়ে তাকে রিসিভ করি। সেদিনই প্রথম জিয়াকে সামনা সামনি দেখতে পাই, তার সঙ্গে হাত মেলাতে পারি।’
সেদিনের স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বল করছে এম এ মালিকের চোখে। তিনি বলেন, সে সময়ে সিলেটের ডিসি ফয়জুল্লাহ সাহেব আমাকে জিয়া সাহেবের সঙ্গে একান্ত মিটিং করার ব্যবস্থা করে দেন। সিলেট সার্কিট হাউসে বসে আমি তার কাছে আমার সংগঠনের কার্যক্রম তুলে ধরি। তিনি খুশি হয়ে তরুণ সংঘের অফিসের ফার্নিচারের জন্য ১০ হাজার টাকা অনুদান দিলেন। সেই থেকে তার প্রতি যে ভক্তি তৈরি হয়েছে, সে অনুপ্রেরণাই আমাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মানুষের সেবা করার শক্তি দিয়েছে।”
যে জিয়াউর রহমানের অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে জড়িয়েছেন, তার সঙ্গে এম এ মালিকের স্মৃতি একেবারেই কম নয়। কথা প্রসঙ্গেই জানালেন, ৭৭-এ হাজারীবাগে তরুণ সংঘের জাতীয় কনভেনশনে আবারও দেখা হয় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। সে কনভেশনে আমিও বক্তব্য দিলাম। তারপর থেকেই জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভক্তি আরও বেড়ে গেলো। তারপর সিলেটে যখন প্রথম জাগদল তৈরি হয়, আমিও সেখানে সদস্য হলাম। তৎকালীন যুব মন্ত্রী আবুল কাসেম তরুণদের জন্য কাজ করতে আমাদেরকে অনুদান দিলেন। সেই সূত্র ধরে কর্নেল অলি আহমেদ, বি. চৌধুরীর মতো নেতার সঙ্গে পরিচয় হলো। আর আমার কর্মকাণ্ড বেড়ে গেলো দ্বিগুণ গতিতে।’
তরুণদের নিয়ে সেই যে কাজ করা শুরু হয়েছে, সেটা এখনও অব্যাহত আছে এম এ মালিকের। কোনো বাধাই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। দিনদিন নিজের যোগ্যতা আর মেধায় এগিয়ে চলেছেন চূড়ার দিকে। যেখানেই গেছেন, সেখানেই তুলে ধরেছেন বাংলাদেশকে। ৭৯ সালে ডেপুটি গ্রুপ লিডার হিসেবে যোগ দিয়েছেন কানাডায় ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ অর্গানাইজেশন লিডারশিপ ট্রেনিংয়ে। সেখানে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ট্রেনিংয়ে। তারপর ভারতের চন্ডিগড়েও অংশ নিয়েছে ছয় মাসের প্রশিক্ষণে।
শুধু তাই নয়, সে সময়ে জাতীয় যুব সংস্থার সিলেট সাব ডিভিশনের প্রধান ছিলেন এম এ মালিক। তখন নাটোরের উত্তরা গণভবনে যুবকদের নিয়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মশালায় যোগ দেয়ার সুযোগ হয় তার। এই পুরো সাতদিনই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেখানে অবস্থান করেন। দেশের জন্য কাজ করতে যুবকদের নানারকম উৎসাহ যোগান তিনি। সে সাতদিনই জিয়ার কাছাকাছি থেকে বিভিন্ন বিষয়ে যেমন শিখতে পেরেছেন, তেমনি দেশপ্রেমে নতুনভাবে উজ্জ্বীবীত হয়েছেন মালিক।
সিলেট উন্নয়নের রূপকার ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে এম এ মালিকের। তার দিক নির্দেশনায় যুবদলের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এ নেতা।
পরবর্তীতে কাল হয়ে দাড়ায় এসব উদ্যোগ। জিয়াউর রহমানের পরেই আসে স্বৈরশাসক এরশাদের আমল। আর তখনই খড়গ নেমে আসে এম এ মালেকের ওপর। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে ৭টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। রাজনীতির পাশাপাশি তখন তিনি ব্যবসাও করতেন। সবকিছু ছেড়ে তখন দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।
বিলেতে গিয়েও থেমে নেই তিনি। শুরু করেন মানবাধিকার নিয়ে কাজ। গঠন করেন সিটিজেন মুভমেন্ট। যে সংগঠনটির শাখা এখন বিশ্বের ৭৩টি দেশে। সিটিজেন মুভমেন্টের ব্যানারে তিনি অংশ নেন জেনেভা কনভেনশনে। দুইবার তিনি সেখানে বক্তব্যও দেন। এম এ মালেক বলেন, আমি প্রতিবছরই এ কনভেনশনে অংশ নেই। দুইবার বক্তব্য দিয়েছি। তখন জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গত বছর জাতি সংঘের নিউইয়র্কে কালচারাল ডিম্প্লোমেসি বিষয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি। আমার ছেলেও বক্তব্য দিয়েছে। তবে এবার ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) লন্ডনে অবস্থান করায় সেখানে অংশ নেইনি।’
তিনি বলেন, সিটেজেন মুভমেন্ট দিয়ে লন্ডন পার্লামেন্টে বাংলাদেশের গুম খুনের বিষয় তুলে ধরেছি। এ বিষয়ক ১১টা সেমিনার আমি করিয়েছি। স্পেনের সরকারি দলের ফরেন মিনিস্টার আমাকে আমন্ত্রণ জানান। সেখানেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরি।
টানা ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সেক্রেটারি ছিলেন এম এ মালিক। তারপর উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন। মাঝখানে দুই বছর বিরতি দিয়ে তিনি দায়িত্ব নেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতির। আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করে এবার আবার নতুন করে নির্বাচিত হন সভাপতি পদে। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন ম্যাডাম খালেদা জিয়া আমাকে পছন্দ করেন। আর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সঙ্গেও আমার যোগাযোগ অত্যন্ত ঘনিষ্ট। তার দিক নির্দেশনা নিয়েই আমি দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি।’
দেশের বাইরে সরকার বিরোধী সব কর্মসূচিতে মালিককে দেখা যায় সবার আগে। তিনি বলেন, ‘আমি পনের বছর যাবত দেশে যেতে পারছি না। আমি দেশে দেশে ঘুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি, জনমত গড়ে তুলি।’
তিনি বলেন, “৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সিলেট-৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জের আংশিক) আসনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আমি পুরোদমে কাজও শুরু করি। তখনই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কিছু লোক আমার ভালো কাজে বাধা হয়ে দাড়ায়। বাধ্য হয়ে তখন আমি দেশ ছেড়ে চলে যাই। ফলে পরে আর নির্বাচন করতে পারিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গত ৫ ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এবং শেখ হাসিনা দেশ পালাতে বাধ্য হয়। সময় এসেছে এখন ঘুরে দাঁড়াবার। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এখন আর কোনো বাধা সৃষ্টি হয় না। প্রায় এক যুগ পরে বীরের বেশে ফিরে এসেছে সিলেটের সন্তান এম এ মালিক। হাজারো নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন এম এ মালিক।