প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এখনো বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে দেশের প্রায় ২ কোটি গ্রাহক। এদিকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে মঙ্গলবার (২৮ মে) দফায় দফায় লোডশেডিং এর খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার রাত ১টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন ৩ হাজারের ঘরে নেমে যায়। মঙ্গলবার ভোর ৫টায় সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৬৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এ সময় সারাদেশে একই পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে উৎপাদন বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় চহিদা সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। এসময় উৎপাদন ছিলো ১০ হাজার ৬২১ মেগাওয়াট। কোনো ঘাটতি ছিলো না। পিডিবি ও পিজিসিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, ঝড়ের ধ্বংসজ্ঞ থেকে রক্ষা পেতে অধিকাংশ যায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। এজন্য উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে কিন্তু উৎপাদন না বাড়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিচ্ছে, সেগুলো মেইনটেনেন্স করতে গিয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
দেশের অনেক এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়া এবং অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হওয়ায় মোবাইলে চার্য দিতে পারছেন না। ফলে অনেকে যোগাযোগহীন হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে বাগেরহাটে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে দুদিন পরেও গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি। প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক অন্ধকারে রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাগেরহাট কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) সুশান্ত রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তারের উপর গাছপালা উপড়ে এবং সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি গাছপালা উপড়ে ৭০২টি পয়েন্টে তার ছিঁড়ে পড়েছে। ১৩০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে, ৩৫টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ৩৯৪টি মিটার ভেঙে গেছে।
জেলার নয় উপজেলাসহ খুলনার কিছু অংশ নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের এই বিভাগের অধীনে চার লাখ ৮৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তারা পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পাবেন তবে সেটি কখন তা বলতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
মঙ্গলবার বিকেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আসলাম উদ্দীন জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল এর প্রভাবে প্রায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভৌগলিক এলাকায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও এর ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিকারের দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ঝড়ের কারণে তিন কোটি তিন লাখ নয় হাজার সাতশত দুই জন গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে এক কোটি একত্রিশ লক্ষ ছত্রিশ হাজার সাতশত দুই জনকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনো এক কোটি একাত্তর লক্ষ তিয়াত্তর হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। তাদেরকে দ্রুত বিদ্যুতের আওতায় আনতে কার্যক্রম চলমান আছে।
মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঝড়ে ৭৬৬টি ৩৩ কেভি ফিডারে ক্ষতি হয়, পরর্তীতে ৪৫৫টি রিকভারী করা হয়, ৩১১টি বাকি রয়েছে; ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র ক্ষতি হয়েছে ১১০৫, রিকভারী হয়েছে ৬৫৪টি, বাকি আছে ৪৫১; ১১ কেভি ফিডার ক্ষতি হয় ৬২৩৫টি, রিকভারী হয়েছে ২৩৮৪টি, বাকি রয়েছে ৩৮৫১টি; বৈদ্যুতিক খুটির ক্ষতি হয় ৩৮৩৩টি, রিকভারী হয়েছে ২৫৬৭, বাকি রয়েছে ১২৬৬টি, বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্ষতি ২৮১৮টি, রিকভারী হয়েছে ১৬৯৬টি, বাকি আছে ১১২২; তার ছেড়া স্প্যান (কিঃমিঃ) ৩০৫৬ রিকভারী হয়েছে ১৩৬৩, বাকি আছে ১৬৯৩; ইন্সুলেটর ক্ষতি ২৪২৫৮টি, রিকভারী হয়েছে ৭৭২৫টি, বাকি আছে ১৬৫৩৩টি; মিটার ক্ষতি হয়েছে ৫৯৩৯৯টি, রিকভারী হয়েছে ৩০৯৩৩টি, বাকি আছে ২৮৪৬৬টি।
প্রাথমিক তথ্যানুসারে ১০৩.৩৩ কোটি (একশত তিন কোটি তেত্রিশ লক্ষ) টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সমিতি, আরইবি -এর ঠিকাদার ও জনবলসহ ৩০ হাজারের অধিক জনবল মাঠে কাজ করছে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ৬০ শতাংশ গ্রাহক এবং বুধবারের মধ্যে সকল ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন চালুর মাধ্যমে ৮০% গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বাকী গ্রাহকদের সার্ভিস ড্রপ ও মিটার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হবে তাই পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)’র মোট গ্রাহক সংখ্যা পনের লক্ষ চুয়ান্ন হাজার একশ চুয়ান্ন, বর্তমান বিদ্যুতায়িত গ্রাহক সংখ্যা চৌদ্দ লক্ষ তিন হাজার পাঁচশত ছাব্বিশ, এখনো রিকভারী বাকি এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার ছয়শত আটাশ গ্রাহক। প্রাথমিক তথ্যানুসারে ওজোপাডিকো’র ক্ষয়-ক্ষতি পাঁচ কোটি সাত লক্ষ একাশি হাজার সাতশত দুই টাকা।