বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তিতে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নির্ধারিত নীতিমালা উপেক্ষা করে অটোমেশন সিস্টেম চাপিয়ে দেয়ার কারণে এখনো অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অর্ধেক শিক্ষার্থীও ভর্তি হননি। অথচ বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে।
ভর্তিপ্রক্রিয়া কবে সমাপ্ত হবে, তা অনিশ্চিত থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্কুলার অনুযায়ী আগামী ২৩ জুলাই ক্লাস শুরু হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকপক্ষ বলেছেন, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সরকারই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়েছে। নীতিমালাও করে দিয়েছে। সেই নীতিমালা ও গাইডলাইন কেউ না মানলে ব্যবস্থা নেয়ার এক্তিয়ার রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। কিন্তু নিজেদের করা নীতিমালা নিজেরাই মানছে না। উলটো নতুন আইন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এক শ্রেণির অদক্ষ, অযোগ্য ও ঘুষখোরদের কারণেই অটোমেশন পদ্ধতি চালু করে নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে নতুন আইন চাপিয়ে দিয়ে অনেক মেডিকেল কলেজকে ধ্বংস করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা-ও আবার সরকারের শেষ সময়ে।
এটা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র বলে অনেকেই মনে করছেন। এদিকে গরিব ও মেধাবী কোটায় কাকে কোথায় ভর্তি করানো হবে, এর তালিকা অজ্ঞাত কারণে ওয়েবসাইটে না দিয়ে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে কলেজগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিতে সঠিকভাবে ভর্তি করানো হচ্ছে, কোনো সমস্যা নেই।
অভিভাবকরা অটোমেশন পদ্ধতি চালু করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সন্তানরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পছন্দমতো মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে পারছি না। ২০-২৫ লাখ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে যার বাড়ি সিলেট কিংবা দিনাজপুরে সে তো ঢাকার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবে না। আবার ঢাকার শিক্ষার্থীরা তো সিলেটে কিংবা দিনাজপুরে গিয়ে ভর্তি হবে না। বিশ্বের কোথাও মেডিকেলের মতো ব্যয়বহুল শিক্ষায় ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি নেই।
জটিলতার কারণে মেডিকেলের পরিবর্তে বহু শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হলে বেশির ভাগ মেডিকেল কলেজ ছাত্রছাত্রী খুঁজেই পাবে না। ফলে এর দায় অধিদপ্তরকেই নিতে হবে।
অটোমেশন পদ্ধতিতে আত্মঘাতী হিসেবে আখ্যায়িত করে কলেজগুলোকে টিকে থাকার জন্য অবিলম্বে অটোমেশন পদ্ধতি স্থগিত করে পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো অবশিষ্ট ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এত দিন কলেজগুলো নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী ভর্তি করত। শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে আবেদন করতেন। সেখান থেকে মেধা ক্রমানুসারে ভর্তি হতে পারতেন তারা। কিন্তু এবার সরকার অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি করে দিয়েছে। দেশে অনেক নামিদামি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে।
এসব কলেজের সিংহভাগ শিক্ষকরা অটোমেশন পদ্ধতি চালু করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিকিৎসা শিক্ষায় অনীহা তৈরি হতে পারে। ধনীর ছেলেমেয়েদের পড়তে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীসংকট দেখা দেবে। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালনা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। এই খাতে ভবিষ্যত বিনিয়োগে ভাটা পড়তে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সরকারের সব উদ্যোগই ভালো। কিন্তু কিছু অযোগ্য, অদক্ষ কর্মকর্তার কারণে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।
সূত্র: ইত্তেফাক