আহমাদ ইজাজ:
হজ ও ওমরাহর ফজিলত অপরিসীম। হজের সময়টা নির্দিষ্ট কিছুদিন হলেও বছরের যেকোনো সময় ওমরাহ করা যায়। তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরাহ পালন করা বিধেয় নয়; এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরাহ পালন করা যায়।
নিম্নে ওমরাহ পালনের পার্থিব ও অপার্থিব উপকার নিয়ে আলোচনা করা হলো—
গুনাহ মাফ হয় : রাসুল (সা.) বলেছেন, এক ওমরাহর পর আরেক ওমরাহ—উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহর) জন্য কাফফারাস্বরূপ।
আর জান্নাতই হলো কবুল হজের প্রতিদান। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)
তাই সামর্থ্য থাকলে সুযোগ পেলেই ওমরাহ করা উচিত।
রিজিক বাড়ে : অধিক ওমরাহ করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ওমরাহ পালনকারীর রিজিকে বরকত দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা ধারাবাহিক হজ ও ওমরাহ আদায় করতে থাকো। এ দুটি আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন—ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-জং দূরীভূত হয়ে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
রমজানে ওমরাহ হজতুল্য : রমজান মাসে ওমরাহ পালন করলে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের? ইবনে আব্বাস (রা.) নারীর নাম বলেছিলেন; কিন্তু আমি ভুলে গেছি। ওই নারী বলল, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ নারীর স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি।
নবী (সা.) বলেন, আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরাহ করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৮২)
হজ-ওমরাহকারী আল্লাহর মেহমান : হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। ইবন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর পথে যুদ্ধে বিজয়ী, হজকারী ও ওমরাহকারী আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। আল্লাহ তাদের আহবান করেছেন, তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আর তারা তাঁর কাছে চেয়েছেন এবং তিনি তাদের দিয়েছেন। (ইবন মাজাহ, হাদিস : ২৮৯৩; ইবন হিব্বান, হাদিস : ৩৪০০)
হজ-ওমরাহর সফরে মারা গেলে : হজ-ওমরাহ করার নিয়তে বের হয়ে মারা গেলে হজের সওয়াব পেতে থাকবে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশে বের হয়েছে; অতঃপর সে মারা গেছে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি ওমরাহর উদ্দেশে বের হয়ে মারা যাবে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ওমরাহর নেকি লেখা হতে থাকবে। ’ (সহিহুত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস : ১১১৪)
প্রতি কদমে নেকি : আনাস ইবন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কারণ যখন তুমি বাইতুল্লাহর উদ্দেশে আপন ঘর থেকে বের হবে, তোমার উটনীর প্রত্যেকবার পায়ের ক্ষুর রাখা এবং ক্ষুর তোলার সঙ্গে সঙ্গে তোমার জন্য একটি করে নেকি লেখা হবে, তোমার একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১১১২)
অন্যকে ওমরাহ করানোর ফজিলত : আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর কাছে একজন লোক এসে তার নিজের জন্য একটি বাহন চাইল। কিন্তু তাকে তিনি দেওয়ার মতো কোনো বাহন না পেয়ে তাকে অন্য এক লোকের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই ব্যক্তি তাকে একটি বাহন দিল। সে এ ঘটনাটি নবী (সা.)-এর নিকট এসে বললে তিনি বলেন, সৎকাজের পথপ্রদর্শক উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৭০)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, সামর্থ্যহীন কাউকে হজ-ওমরাহ করালে নিজেও হজ-ওমরাহর সমান সওয়াব লাভ করবে।