Imam Hossain
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট) শিক্ষার্থী আসিফ আলম একবার বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন ওই অঞ্চলে ফল চাহিদার একটি বড় যোগান আসে কলার মাধ্যমে৷কলাগাছগুলো একবার ফল দিলে কেটে ফেলা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই৷জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় স্থানীয়দের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাড়ায়৷
সেখান থেকে আসিফ ভাবলেন এই কেটে ফেলা কলাগাছকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়।সেখান থেকেই তিনি ‘ব্যানানা প্যাড’ তৈরীর কথা মাথায় আনেন।এটি একধরনের স্যানিটারি প্যাড।
সাধারণত পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী নারী ও কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাড প্রাপ্তির অসহজলভ্যতা, উচ্চমূল্য, অসচেতনতা ইত্যাদি সমস্যাগুলো থাকেই।তাই বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পমূল্যে ও সহজে ব্যবহার উপযোগী স্যানিটারি প্যাড বানানো যায় তা নিয়ে চিন্তা শুরু করলেন আসিফ আলম।
প্রথমে তৈরীকৃত প্যাডে দ্রুত তরল শুষে নেয়ার উপযোগী একটি চিপ লাগিয়ে বারবার ব্যবহার উপযোগী করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করেন তিনি।সফলও হন।কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও মূল্য সুলভ সীমায় না থাকায় তা ভেস্তে যায়।
এরপর অন্য উপায়ে আবার চেষ্টা করেন তিনি। তিনি জানান,কলাগাছের ফাইবার সাধারণ কাপড়ের চেয়ে অধিক শোষণক্ষম। তবে ফাইবারে পরিণত করতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়৷
প্রথম ধাপটি হলো কলাগাছের অভ্যন্তরস্থ প্রায় ৯০ ভাগ পানির নিষ্কাশন ৷এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দরকার বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রের(মোটর)৷কিন্তু আসিফ ভাবলেন বৃহৎ পরিসরে এটি সফল করতে এক্ষেত্রে বিদ্যুতের খরচের একটি বিষয় থেকে যায়।তাই একই কাজটি সম্পন্ন করতে পাহাড়ি ঝর্ণার পানিপ্রবাহ ব্যবহার করে হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্লান্টের টারবাইনকে কাজে লাগাতে চান তিনি।এই যন্ত্রটির নাম ‘রিসাইক্লার’। এতে করে ফাইবার উৎপাদনে বিদ্যুতের ব্যবহার আর লাগছে না৷ বেঁচে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। প্রকৃতিকে ব্যবহার করে কার্বন নির্গমন রোধে তৈরি হবে ফাইবার৷
আসিফ জানান, কলাগাছের ফাইবার নিয়ে আগেও কাজ হয়েছে।কিন্তু এর শোষণ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে অগ্রগতি বেশ কম লক্ষ্য করা যায়৷তার উদ্ভাবিত ‘ব্যানানা প্যাড’ দেখিয়েছে বিস্তর সফলতা৷ এতে মোট তিনটি ট্রিটমেন্টের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন।এর মাধ্যমে সাধারণ কাপড়ের চেয়ে মোট ত্রিশগুণ বেশি শোষণক্ষম প্যাড বানানো সম্ভবপর হবে৷ট্রিটমেন্টগুলো প্রক্রিয়াগুলো ব্যয়বহুল না হওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে সীমিত দাম রাখা সম্ভবপর হবে৷
এছাড়া বর্তমানে বাজারে বিক্রিত স্যানিটারি প্যাডগুলোর অনেকগুলোতেই একটি ভয়াল রাসায়নিক উপাদান ডাইঅক্সিন ব্যবহার করা হয়৷স্যানিটারি প্যাডগুলোকে সুগন্ধিযুক্ত করতে মূলত এটি ব্যাবহার করা হয়।এটি মানবদেহে ক্যান্সারের মত গুরুতর রোগের সৃষ্টি করতে পারে৷তবে ব্যানানা প্যাড এক্ষেত্রে ‘কেমিক্যাল ফ্রি’ তত্ত্ব প্রয়োগের চেষ্টা করেছে৷মানবদেহের জন্য ন্যূনতম ক্ষতিকর ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বর্জন করা হয়েছে৷
আসিফ আলম চুয়েটের মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী৷ ইতিমধ্যেই তার ‘ব্যানানা প্যাড’ প্রজেক্ট বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জয়ের খেতাব অর্জন করে ফেলেছে।
সম্প্রতি আই ইইই বাংলাদেশ সেকশন আয়োজিত স্নাতক প্রজেক্ট সেগমেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে ‘ব্যানানা প্যাড’। ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজিত ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ডে ২০২২’ এর প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশন কম্পিটিশনেও চ্যাম্পিয়ন হয় প্রজেক্টটি। এছাড়াও ইউনাইটেড নেশন্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস চ্যালেঞ্জ-২০২২ এর ফাইনাল সিলেকশনে অর্জন করে অন্যতম সেরা স্টার্টআপের খেতাব৷
আসিফ মনে করছেন, প্রজেক্টটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী ও কিশোরীদের যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, ঠিক তেমনি ওই অঞ্চলে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ।বড় কোনো কোম্পানি এটি বাস্তবায়নে সহায়তা করলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও সুনামের সাথে রপ্তানি হবে এই ব্যানানা প্যাড।