কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শ্মশ্মান থেকে সোহাদেব মন্ডল (৮৫) নামের এক মৃত ব্যক্তির দেহ তুলে মাথা কেটে পূজা করা ও পূজা শেষে গাছে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন এমন চাঞ্চল্যকর ও ঘৃণিত কাজ করেছে। পরে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে তোপের মুখে আটদিন পর বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় শ্মশ্মানে মাথাটি পুতে রাখে প্রতিপক্ষের লোকজন।
উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। মৃত ব্যক্তি ওই গ্রামের মৃত মাধক চন্দ্র মন্ডলের ছেলে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন মৃত ব্যক্তির দুই ছেলে অশিক মন্ডল ও অশোক মন্ডল।
অশিক ও অশোক মন্ডল বলেন, প্রায় এক বছর পূর্বে বার্ধক্যজনিত কারনে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য দাহ না করে চাপা মাটি দেওয়া হয়। কিন্তু শত্রুতা পোদ্দার গ্রুপের বিপুল, প্রদীপ, প্রকাশ, হৃদয়সহ অনেকে মিলে গত ১৩ এপ্রিল বুধবার রাতের আধারে শ্মশ্মান থেকে বাবার মাথা কেটে নিয়ে যায়।
মাথা দিয়ে সাতদিন চৈত্র পূজা করে হাজরা গাছে গামছা দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে পোদ্দার গ্রুপের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা হুমকি ধামকি দেয়।
তাঁরা আরো বলেন, পূজা করতে কোন মাথার প্রয়োজন হয়না। শত্রুতা করেই প্রতিপক্ষরা এমন খারাপ কাজ করেছে। আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। আমি সুষ্ট বিচার দাবি করি।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, একসময় রামনগরে হিন্দুরা মিলেমিশে বসবাস করতেন।কিন্তু জমি সংক্রান্ত জেরে প্রায় ১২ বছর পূর্বে শিকদার ও পোদ্দার গ্রুপের জন্ম হয়। শিকদার গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় অরুন কুমার শিকদার এবং পোদ্দার গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় পল্লী চিকিৎসক বাবলু পোদ্দার।
সেই সুত্র ধরে পোদ্দার গ্রুপের বিপুল কুমার, বিপ্লব, প্রকাশ, প্রদীপ, বসু, হৃদয়সহ অন্যান্য সমর্থকরা চৈত্র পূজা উপলক্ষে গত ১৩ এপ্রিল রাতে রামনগর পঞ্চপল্লী শ্মশ্মান থেকে প্রতিপক্ষের মৃত সোহাদেব মন্ডলের মাথা কেটে আনে।
পরে সেই মাথা দিয়ে রামনগর হাজরা গাছ তলায় সাতদিন পূজা করে এবং পূজা শেষে মাথাটি লাল গামছা দিয়ে হাজরা গাছে ঝুলিয়ে রাখে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে তোপের মুখে পোদ্দার গ্রুপের হৃদয় ও প্রদীপ বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে রামনগর পঞ্চপল্লী শ্মশ্মান পুনরায় মাথাটি পুতে রাখে।
এবিষয়ে পোদ্দার গ্রুপের প্রদীপ বলেন, চৈত্র পূজা করার জন্য শ্মশ্মান থেকে মৃত ব্যক্তির মাথা কেটে আনা হয়েছে। যাঁর মাথা আনা হয়েছিল তিনি আমার মামা হতেন। বিষয়টি নিয়ে নানান কথা হচ্ছিল।তাই সাতদিন পূজা শেষে বৃহস্পতিবার সকালে আবার শ্মশ্মানে পুতে রাখা হয়েছে।
একই গ্রুপের বিপুল কুমার বলেন, চৈত্র পূজার জন্য মাথায় লাগে। ইচ্ছে হয়েছে তাই সোহাদেবের মাথা আনা হয়েছিল। প্রয়োজনে কবর থেকেও মাথা আনা হতে পারে।
পোদ্দার গ্রুপের প্রধান পল্লী চিকিৎসক বাবলু পোদ্দার বলেন, পূজাতে আমি যায়নি, কিন্তু মাথা দিয়ে পূজার কথা শুনেছি। তবে আমার জীবনে এমন পূজা দেখিনি। তিনি আরো বলেন, এর সাথে আমি জড়িত নয়। জমি নিয়ে শিকদারের সাথে বিরোধ আছে। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
তবে শিকদার গ্রুপের লোকজন বলছেন চৈত্র পূজা করতে কোন মাথা লাগেনা। শত্রুতা করে এবং আধিপত্য বিস্তার করতে পোদ্দার গ্রুপের লোকজন মহা অন্যায় কাজ করেছেন।
এবিষয়ে শিকদার গ্রুপের অমল কুমার বলেন, ৫৫ বছর বয়স হল। পূজা করতে মাথা লাগে একথা কোনোদিন শুনিনি। এর একটা শাস্তি হওয়া দরকার।
শিকদার গ্রুপের প্রধান ও রামনগর পঞ্চপল্লী শ্মশ্মানের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অরুন শিকদার বলেন, পোদ্দার গ্রুপের লোকজন শ্মশ্মান থেকে মাথা কেটে নিয়ে চাঞ্চল্যকর পূজা করেছে, যা শাস্ত্রে নেই। আবার সেই মাথা হাজরা গাছে ঝুলিয়ে রেখে প্রভাব খাটিয়েছে। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় মাথা শ্মশ্মানে পুতে রাখে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানা হয়েছে।
পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, শত্রুতার জেরে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এলাকা পরিদর্শন করেছি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মাথা কেটে পূজা করার ঘটনাটি সত্য। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, পূজা করতে মাথা লাগে এমন ঘটনা শাস্ত্রে নেই। বিষয়টি জানতে পেরেছি। পুলিশ কাজ করছে বিষয়টি নিয়ে।