কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের পিসিআর ল্যাবের ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি
কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য স্থাপিত পিসিআর ল্যাব ভবনে চুরির ঘটনা ঘটেছে। একটি পিসিআর যন্ত্রসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। ফলে জ্বর সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য উপসর্গে আক্রান্তরা করোনা রোগী কিনা তা নির্ণয়ে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। এতে শহরের সচেতন মহল জানিয়েছে ক্ষোভ-উদ্বেগ।
এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়নি। গতকাল শুক্রবার রাতে চুরির বিষয়টি শহরে জানাজানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোভিড-১৯ ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে আক্রান্ত রোগী শনাক্তে কুষ্টিয়া ২৫০ বেড জেনারেল হাসপাতালের পেছনে লাশ কাটা ঘরের পাশে ২০২০ সালের ৯ মে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপিত হয়। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধীন এটি পরিচালিত ও সংরক্ষিত ছিল। চুরি ঘটনাটি জানাজানির পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান খান জানান, ২০২৫ সালের ১১ মে পর্যন্ত ল্যাবরেটরির সব কিছু ঠিক-ঠাক ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১১ মে (বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি) দিবাগত রাতে ল্যাবরেটরির গ্রিল কেটে চোরের দল ৩০/৩৫ লাখ টাকা মূল্যমানের যন্ত্রাংশ চুরি করে নেয়। এতে ১টি পিসিআর মেশিন, ১টি কম্পিউটার, ১টি এসি ও ৬টি এসির আউটডোর অংশসহ আনুমানিক ৩৫/৪০ লাখ টাকা মূল্যমানের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। ঘটনাটি তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ঘটনাটি অবহিত করেন।
এছাড়া গত ১২ মে পিসিআর র্যাবে দায়িত্বরত টেকনোলজিস্ট খাইরুল ইসলাম বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু মামলা দায়েরর এক মাস পরও চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশ উদ্ধার কিংবা আসামীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া দায়েরকৃত মামলাটিরও নেই কোন অগ্রগতি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) পরিদর্শক আব্দুল আলিম জানান, চুরি ঘটনাটি তদন্তে একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। মামলাটির এখনো তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে অতি গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে পাঁচ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শহিদুল ইসলাম ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে দ্রুত চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনসহ পিসিআর ল্যাবটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ইতিমধ্যে ২৫০ বেড হাসপাতাল থেকে পিসিআর ল্যাবটি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ৬তলা ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে যন্ত্রাংশ চুরিসহ স্থানান্তরিত হওয়ায় পিসিআর ল্যাবরেটরিটি করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে সক্ষমতা হারিয়েছে ।
কুষ্টিয়া নাগরিক অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ম্পেশাল পিপি শামিমুল হাসান অপু জানান, পিসিআর ল্যাবে চুরি ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। দ্রুত পিসিআর ল্যাবটি চালুর ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের আহবান জানান।
এদিকে এছাড়া কোভিড নির্মূল হওয়ার পর ২০২৫ সালের ২৫ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে সারাদেশে পিসিআর ল্যাবের টেকনোলজিস্টসহ চুক্তিভিত্তিক লোকবল নিয়োগ বাতিল ঘোষণায় কোভিড রোগী শনাক্তকরণে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই জেলায় এখনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। তবে ২০ বেডের একটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কুষ্টিয়া ২৫০ বেড জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাহবুবুর রহমান খান জানান, সম্প্রতি করোনা ভাইরাস ফের ফিরে আসায় কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাবের চরি যাওয়া যন্ত্র প্রতিস্থাপন,মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ জনবল, পিপিই ও কীট সরবরাহে অতি সম্প্রতি চাহিদা দেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ যন্ত্রাংশ ও লোকবল সরবরাহ করা হবে তা তিনি সুনিদিষ্টভাবে জানাতে পারেনি। তবে যত দ্রুত সম্ভব পিসিআর ল্যাবটি চালুর চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক