দেশে সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা কোনো কথা নয়। কে কত বড় শক্তিশালী আমি দেখবো। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এমন কিছু বাণিজ্যমন্ত্রী বললে তাকে আমি ধরবো।
মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের নানা দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চান যে সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না এমন কথা কে বলেছেন। জবাবে জানানো হয় বাণিজ্যমন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘ঠিক আছে আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব।’
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে একটা শ্রেণি আছে তারা সবসময় ব্যবসা আছে। তারা যখন আর্টিফিসিয়ালি দাম বাড়ায়, তখন আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেই। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তারা বাধ্য দাম কমাতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট থাকলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না, এটা কোনো কথা হতে পারে না। কে কত বড় শক্তিশালী সিন্ডিকেট, আমি জানি না। কিন্তু আমি দেখব যে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়।
‘আমাদের দেশে একটা নিয়ম আছে যুগ যুগ ধরে। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি শীতকালে যখন বাজারে শিম ওঠে কে কত বেশি দামে কিনতে পারে এটার একটা প্রতিযোগিতা চলত। দুইদিন পর দাম কমে যেত। আবার বর্ষাকালে কাঁচামরিচের দাম বাড়ে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাঁচামরিচ শুকনা করে রেখে দেয়া যায়। পেঁয়াজ শুকিয়ে রেখে দেয়া যায়। যেটার উৎপাদন বেশি হবে সেটা শুকিয়ে রেখে দিলে ব্যবহার করা যাবে। জীবনে কেউ কখনো ভেবেছে যে বর্ষাকালে শিম, লাউ, কপি গাজর, টমেটো খাবে। ভবিষ্যতে এগুলো রাখা, প্রসেস করা, চিলিং সিস্টেমে সংরক্ষণ করার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এখান থেকে চাল কিনতে চান। আমি বলেছি আমাদের ১৭ কোটি মানুষের খাবার দিতে হয় আগে, দেখব যদি উদ্বৃত্ত থাকে অবশ্যই আমরা দেব। আমাদের দেশ থেকে এখন অনেকেই তরকারি কিনতে চাচ্ছে, আমরা দিচ্ছি। এখন তো সুইজারল্যান্ডেও যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এজন্য আমি সবাইকে বলছি নিজেরা উৎপাদন করেন। প্রত্যেকে যদি কিছু উৎপাদন করতে পারে, তখন বাজারে ওপর নির্ভরশীলতা থাকে না। নির্ভরশীলতা এমনিতেই ভেঙে যাবে।
‘কাঁচামরিচ গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে খাওয়ার আলাদা একটা টেস্ট আছে। ডিম যখন বেশি পাবেন সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন, বহুদিন থাকবে। নষ্ট হবে না। সবকিছুর বিকল্প আছে। আমরা রাখি খাই। এগুলো নিজে থেকে শেখা,’ যোগ করেন সরকারপ্রধান।
এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার একটা নতুন দুয়ার খুলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের এ যুগে এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক দক্ষিণের অবস্থানকারী দেশসমূহের উপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে না বলার এখন উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা- নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, সভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সস্প্রদায়কে অবহিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অসমনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের সকল হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ অপচয় না করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের জন্য পণ্য ও পরিষেবা প্রদানে অর্থ সংস্থান করার জন্য আহ্বান জানাই। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানাই।