আমরা সবাই জানি যে ,শিক্ষক হচ্ছেন জাতি গড়ার কারিগর। আর এই মহান কাজের শুরুটা হয় যার হাত ধরে তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।একজন মানুষে সে যেই পেশায়ই থাকুন না কেন সে পেশার লক্ষ্য ,উদ্দ্যেশ্য এবং কার্যাবলী সম্পর্কে তার সম্যক ধারনা থাকা আবশ্যক।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ব্যাপারটাও এর ব্যাতিক্রম নয়।একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পেশাগত কাজের ভিতরে ও বাইরে কী কী কাজ থাকে সে সম্পর্কে আমি আমার নিজস্ব অভিমত ব্যাক্ত করছি।
যখনই আমরা একজন শিক্ষকের কথা কল্পনা করি তখনি চোখের সামনে একটি ছবি ভেসে আসে।ভেসে আসে একটি চরিত্র যিনি হবেন যদু মাস্টারের মত দরিদ্র,সাদাসিধে, সৎ, নির্লোভ,নিষ্ঠাবান,কর্তব্য পরায়ণ শিক্ষানুরাগী,কুশুলী আরও অনেক ইতিবাচক গুণে পরিপূর্ণ। একজন শিক্ষককে রাখতে হবে তার নিজের পেশার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও সম্মান। মনে রাখতে হবে শিক্ষকতা কোনো চাকরি নয় এটি একটি সেবামুলক কাজ যার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই এমন কী এই কাজের পারিশ্রমিক কোনো কিছু দিয়েই পরিশোধ করা সম্ভব নয়।।শিক্ষককে সবসময় মাথায় রাখতে হবে কীভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে আলো জালিয়ে দেওয়া যায় যে আলোয় সে নিজে আলোকিত হবে এবং আলোকিত করবে অন্যকেও।
শিক্ষার মান উন্নয়নে চালিয়ে যেতে হবে অনুসন্ধান শেয়ার করতে হবে অন্য সহকর্মীদের সাথে। বর্তমান ডিজিটাল যুগের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকল্প নেই।তাই শিক্ষক হিসেবে সফল হতে হলে একজনকে অবশ্যই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। ফেসবুক হোয়াটস আপ,মেসেঞ্জার এ সার্বক্ষনিক নজর রাখতে হবে। কখন কোন ইনফর্মেশন আসে কখন কোন বিষয়ে আপডেট হচ্ছে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
একজন শিক্ষককে সব সময় আঞ্চলিকতা পরিহার করে স্পষ্ট ,সহজ, সাবলীল ও চলিত ভাষায় কথা বলা উচিৎ ।একজন শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীদের কাছে আয়নার মত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের মধ্যে নিজেকে খোজে। অন্ধভাবে অনুসরন করে শিক্ষককে।শিক্ষক যে ভাবে কথা বলে তারাও সেভাবে কথা বলে।একজন সাবলীল ও মিষ্টভাষী শিক্ষকের শিক্ষার্থীরাও মিষ্টভাষী হয়।
বছরের শুরুতেই রুটিন তৈরি হয়ে গেলে সারা বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যার আলোকে সে সারা বছরের কর্যক্রম পরিচালনা করবে।এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে পাঠ্য বইয়ের পাঠদান।শিক্ষার্থীর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ সার্বিক বিষয়।
শিক্ষককে একটি পাঠকে ফলপ্রসু করতে হলে অনেক বেশি কুশলী হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরন সব সময় রেডি না ও হতে পারে তাই তাকে হাতের কাছে পাওয়া যায় সহজলভ্য এমন সব বস্তু দিয়ে উপকরণ তৈরি করা শিখতে হবে।
একজন মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌছানো যায় তার নাম ধরে ডাকার মাধ্যমে।মানুষ মাত্রই তার নাম পরিচয়কে ভালোবাসে। তাই শিক্ষকদেরকে তার শিক্ষার্থীদের নাম পরিচয় এবং ফামি্লি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানা অত্যাবশ্যক। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীর শিখার পিছনের প্রতিবন্ধকতা ও পতিকারের উপায় বের করে সঠিক ব্যাবস্থা নিতে পারেন।
মুলত শিক্ষকতা হল এমন একটি পেশা যা কিনা সকল পেশার জন্ম দেয় ।একজন ডাক্তারকেও প্রথমে কোননা কোনো শিক্ষকের কাছে অ আ ক খ শিখে তারপর ডাক্তারি পেশায় প্রবেশ করতে হয়।উকিলকেও ঠিক তাই করতে হয়। তাই বলা যায় সমাজ তথা জাতির ভবিষ্যৎ একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের হাতেই অর্পিত ।
সুখিনুর আক্তার
সহকারী শিক্ষক-৫ নং উয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
লৌহজং,মুন্সীগঞ্জ।