সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ২ জন, চট্টগ্রামে ৩ জন এবং রংপুরে একজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারসমর্থক সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ মানুষ। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। অন্যজন হলেন- মো. শাহজাহান (২৫)। তিনি নিউমার্কেট এলাকার হকার ছিলেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে শাহজাহানের মরদেহ শনাক্ত করেন তার মা আয়েশা বেগম ও মামা মোসলেম উদ্দিন। তারা জানান, শাহজাহানের বাড়ি কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ পোস্তগোলা এলাকায়। তার বাবার নাম মহসিন (মৃত) । তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শাহজাহান ছিলেন তৃতীয়। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচরের চান মসজিদ এলাকায় থাকতেন। শাহজাহান নিউমার্কেট এলাকার বলাকা সিনেমা হলের সামনে পাপোশ বিক্রি করতেন। তিনি সকালে কাজে বের হতেন।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের পর শরিফ ও আকাশ মামুন নামের দুই ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শরিফ ও আকাশ মামুন জানান, নিহত যুবক মোটরসাইকেলে ছিলেন। তার পেছনে আরেকজন ছিলেন। তাকে সেখানে মারধর করা হয়।
অন্যদিকে, রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে অজ্ঞাত একজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে প্রথমে পপুলার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিটি কলেজের সামনে একজন পড়ে ছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে পপুলার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
বিষযটি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, নিহত ওই যুবকের বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। তার পরনে কালো জিন্স ও হালকা পেস্ট রঙের গেঞ্জি আছে। আর ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে যাকে আনা হয়েছে। তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
অন্যদিকে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, মঙ্গলবার বিকালে নগরীর মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে তিনজন নিহত হয়েছেন। ওয়াসিম ছাড়া অন্য দুজনের মধ্যে একজন ছাত্র। তিনি ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমদ শান্ত (২০)। আরেকজন স্টিল ফার্নিচার দোকানের শ্রমিক মো. ফারুক।
এছাড়া রংপুরে বেলা দুইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।