দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাসেরও কম সময় বাকি। সংবিধান মেনে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচনে বর্জনের ঘোষণা আগেই দিয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
ঘোষণা অনুযায়ী স্থানীয় নির্বাচন, সিটি নির্বাচন, উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। দলীয় সরকারের অধীনে শুধু নির্বাচনই বর্জন করেই বসে থাকেনি; দলীয় সরকারের অধীনে দেশে আর নির্বাচনও হতে দেবে না বলে আওয়ামী লীগকে সর্তক করেছে।
১০ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিসহ নানান কর্মসূচি পালন করছে দলটি। দাবি মেনে না নিলে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলো বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনের রোডম্যাপ ঠিক করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এ লক্ষ্যে ৫ জুলাই জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৃহস্পতিবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। ৭ জুলাই গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে। এরপর গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণতন্ত্র মঞ্চসহ আরো কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। নেতা-কর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে বলেছে দলের হাইকমাণ্ড।
বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যখন পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তখনই আমাদের একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে। একটা চূড়ান্ত মুহূর্তে উপনীত হয়েছি আমরা। ১০ দফা দিয়েছিলাম, সরকার তার কোনো দফাই মানেনি। এখন আমরা একদফায় যাচ্ছি। খুব শিগগিরই ঘোষণা আসবে। দলের হাইকমান্ড থেকে আমাদের সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যে কোনো সময় ঘোষণা আসবে।
এদিকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হয়েছে। আগাম ৯ জুলাই সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর খুলনা এবং ঢাকায় আরও দুটি সমাবেশ করবে তারা। পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী ও মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি জনতার পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রমজীবীদের নিয়ে পদযাত্রা করবে নোয়াখালীতে। এ ছাড়া দিনাজপুরে ১৯ জুলাই, রাজশাহীতে ২৮ জুলাই, যশোরে ৫ আগস্ট, হবিগঞ্জে ১২ আগস্ট, বরিশালে ১৯ আগস্ট পদযাত্রা হবে। অন্যদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য দল পৃথক কর্মসূচি পালন করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন চলমান। মিটিং হচ্ছে, জনসভা হচ্ছে, মিছিল হচ্ছে, পদযাত্রা হচ্ছে- এসব আন্দোলনেরই অংশ। আমরা আন্দোলনেই আছি, মাঠের আন্দোলন চলছে। দাবি না মানলে আগামীতে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ৩৬ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আন্দোলন করে চলেছি। এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি৷ সকল দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অতি শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবো। এবারের আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলনে সমস্ত মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং জনগণ তার অধিকার আদায় করে নেবে।