বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সারা বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। জনগোষ্ঠীর কেউ ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা না করে সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য দিলেন।
রোববার দুপুরে বঙ্গবাজার এনেক্সকো টাওয়ারের সামনে ব্যবসায়ী নেতাদের সহায়তার অর্থ বুঝিয়ে দেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বকুল হাজি ও দিপালী হিজড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে অনুদানের নগদ ২০ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন।
এ সময় আগামীতে নগদ অর্থের পরিবর্তে ব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান দিতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজ তাদের এই বিপদের সময়, আমরা আমাদের এবারের ঈদের যেসব কেনাকাটা রয়েছে সেই কেনাকাটা না করে ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারাদেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো।
গুরুমা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক-দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দেবো। এই টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে দেয়া হবে না, পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এই টাকা পৌঁছানো হবে।
অনুদান হস্তান্তরকালে ঢাকাসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে তাদের সরদারনী আলেয়া হিজড়া হজের জন্য জমানো টাকা থেকে দুই লাখ টাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান হিসেবে দেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আজ হাতে পাওয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ২০ লাখ টাকা দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করবো তাদের যেনো কখনো অবহেলার চোখে না দেখে। এখন থেকে আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবো।
তিনি নগদ অর্থ দেয়াকে নিরুৎসাহিত করে বলেন, আমরা সবাইকে বলব, যারা সহযোগিতা করবেন, নগদ টাকা না দিয়ে ব্যাংকে টাকা দিন। তাতে বিষয়টি সবার জন্য সহজ হবে, স্বচ্ছতা থাকবে। আমরা চাই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুলুক এবং অনুদানের পুরো অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কল্যাণে ব্যয় হোক।
এদিকে কুমিল্লা থেকে ২৬ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। তার মধ্যে স্থানীয় সাংসদ আ ক ম বাহার উদ্দিন নিজ তহবিল থেকে ১০ লাখ, কুমিল্লা জেলা দোকান মালিক সমিতি ১০ লাখ, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫ লাখ ও সিটি করপোরেশন মেয়র ইরফানুল হক রিফাত নিজ তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা অনুদানের চেক বঙ্গবাজার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিলে জমা দেন।
অপরদিকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংস্থাটির কর্মীদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ ২ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেয়া হয়েছে।